প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে দেশি বিদেশি বিনিয়োগের নতুন দ্বার খুলছে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। চলতি বছরে বাকি কাজও শেষ হওয়ার কথা। কাজ শেষ হলেই প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। পার্কের কাজ শুরু হলে প্রকৃতি কন্যা সিলেট অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবে। তাছাড়া অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্কে বিনিয়োগ শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আরো অনেকে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু পার্কের পরিধি কম থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিধি বাড়লে তাদের বিষয়ে বিবেচনা করবে কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক
জানা যায়, সিলেটের পাথর রাজ্য খ্যাত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকায় ১৬৩ একর জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্ক। এরই মধ্যে পার্কটির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
তিনটি ভবণের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে হয়েছে। আইসিটি পার্কের প্রবেশপথেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ। ব্রিজ পার হলেই ডান ও বাম দিকে রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য নির্ধারিত দুটি স্থান। সেখানেও একতলা করে একটি কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। তার ঠিক ২০০ মিটার পরেই রয়েছে ব্যাংক ও প্রশাসনিক ভবন। সেখানে তিনটি ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। প্রবেশপথের ডান দিকে আরো একটি ভবন নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকরা।

নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক
পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজ শেষ হওয়ার আগেই হাইটেক পার্কটিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। পার্কটিতে সনি র্যাংকস ৩২ একর জমি, পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য ৩ একর, বোর্ড ক্লাব ২ একর, ব্যাংক ভবনের ডান পাশ নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, অ্যাডমিন ভবনের তৃতীয় তলা নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চার পাঁচজন মিলে ওই ভবনের দুই তলা ও নিচতলা ক্রয় করেছেন।
এছাড়াও আরো অনেক বিনিয়োগকারী সেখানে জমি কিনেছেন। তাছাড়া আরএফএল কোম্পানি ১০০ একর জমি চাইলে পর্যাপ্ত জমি না থাকার কারণে তাদেরকে দেওয়া যায়নি। তবে পরবর্তীতে পার্কটির পরিধি বাড়ানো হলে সেই বিষয়ে চিন্তা করে দেখা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীতে পরিপূর্ণ হলে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সিলেটের আরো বেশি উন্নতি হবে।

গ্যাস লাইন স্থাপন ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ প্রকল্পটির অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইটেক পার্কটির আইটি বিজনেস সেন্টারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, হাইটেক পার্কটি সিলেটের মানুষের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার। এখানে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগের সৃষ্টি হবে। এটির মাধ্যমে সিলেটে পরবর্তীতে আরো বড় ধরণের বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন সিলেটের মানুষ। হাইটেক পার্কে যাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন সেই বিষয়ে আমরা অনেক সভা-সেমিনার করেছি।

৩১ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট আইটি বিজনেস সেন্টার
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের প্রকল্প প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কটি বাজেটের মধ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটিতে বাজেট ধরা হয়েছে ৩৩৩ কোটি টাকা। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক আরো বলেন, বিনিয়োগকারীরা জমি কিনতে শুরু করেছেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সব চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। এই বিভাগের দেওয়া ফরমেট অনুযায়ী আবেদন করার পর যাচাই বাছাই করে চুক্তি করা হচ্ছে। চুক্তির পর তাদের জমিতে তারা নিজেরাই ভবন নির্মাণ করবেন। আমরা শুধু তাদেরকে জমি ও ইউটিলিটি সুবিধা দিয়ে থাকব।

নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্কে বিনিয়োগ শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, হাইটেক পার্কের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখান থেকে সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও যন্ত্রাংশ তৈরি হবে। পাশাপাশি এখানে সবাই বিনিয়োগ করতে পারবেন। অনেকেই এখানে বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন। এখানে প্রায় ৩১ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট আইটি বিজনেস সেন্টার, ক্যাবল ব্রিজ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, গ্যাস লাইন স্থাপন ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ডেইলিবাংলাদেশ