এসএমই খাতের জন্য ৫ বছর মেয়াদি উন্নয়ন রূপকল্প

এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত উন্নয়ন রূপকল্প তৈরি করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্যে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০০ কোটি টাকা বিতরণ, একটি জাতীয় এবং বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ১৬টি আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন, নতুন উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং দক্ষতা উন্নয়নে অন্তত পাঁচ হাজার উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

তা ছাড়া অনলাইন মার্কেটিংয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য অনলাইন প্রোডাক্ট ডিসপ্লে প্ল্যাটফর্ম, নারী উদ্যোক্তা ও ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্য ঠিক করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইউনিডোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ২৭ জুনকে ‘এমএসএমই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই হিসাবে এ বছর সারা বিশ্বে পঞ্চমবারের মতো দিবসটি পালিত হচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশন প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘এমএসএমই দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগ নেয়।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

স্বাগত বক্তৃতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে এসএমই উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে এ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকা বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তবে এসএমই ফাউন্ডেশন মনে করে, দেশের মোট অর্থনীতির চার ভাগের এক ভাগ এসএমই খাতের উন্নয়ন এবং এসএমই নীতিমালা ২০১৯ বাস্তবায়নে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে কার্যালয় স্থাপন, ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম, এসএমই উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে প্রতিবছর বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনকে একটি কার্যকর ও স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করাই হলো এমএসএমই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেন, দেশের এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন, বাজার সংযোগ সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসব উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে দেশের উদ্যোক্তাদের পণ্য সারা বিশ্ব জয় করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯-এর মধ্যেও দেশের প্রত্যন্ত পাড়ায়, গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন। এখন দরকার তাদের দক্ষতা উন্নয়ন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াস আরও জোরদার করবে বলেও মনে করেন তিনি। এসএমই ফাউন্ডেশনকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়েও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ ভাগ। এসএমই নীতিমালা ২০১৯-এ ২০২৪ সালের মধ্যে এসএমই খাতের অবদান ৩২ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের অধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা সিএমএসএমই।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের তরুণ ও যুবসমাজ এখন চাকরি খুঁজছে না, নিজেরাই চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোক্তা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১০ সালে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন প্রত্যন্ত দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে। বর্তমানে ৭ হাজার ডিজিটাল সেন্টারে ১৩ হাজার উদ্যোক্তা কাজ করছে। আইসিটি খাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান তৈরির করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।