মুজিববর্ষে জিটুপির আওতায় আসছে ৯০ লাখ ভাতাভোগী

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার দুঃস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতার অর্থ দ্রুততম সময়ে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সুবিধাভোগীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালে (মুজিববর্ষ) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে ৮৮ লাখ ৫০ হাজার ভাতাভোগীকে ইলেকট্রনিক উপায়ে জিটুপি (গভর্মেন্ট টু পারসন) পদ্ধতিতে সরাসরি ভাতাভোগীর নিজস্ব হিসাবে ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া প্রায় ২ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ইএফটির (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে।

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (নগদ ও বিকাশ) মাধ্যমে ভাতা প্রদান: গত ১৪ জানুয়ারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১১২টি উপজেলায় মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (নগদ ও বিকাশ) মাধ্যমে ভাতা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে চারটি কর্মসূচির (বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি) আওতায় প্রায় ১২ লাখ ভাতাভোগীকে ভাতা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতা ও ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু হয়। বর্তমানে শতভাগ প্রতিবন্ধীকে ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশের ১১২টি উপজেলার ভাতা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ বয়স্ক ব্যক্তি এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বয়স্ক ব্যক্তি এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে ভাতার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

বর্তমানে সমাজসেবা অধিদফতর ৫০টির বেশি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার চারটি বৃহৎ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮৯ লাখ জনগোষ্ঠীকে সরাসরি সেবা প্রদান করে আসছে সমাজসেবা অধিদফতর।

এ চারটি কর্মসূচি হলো: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি।

বয়স্ক ভাতা: ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়া। বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৯ লাখ বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ২৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে।

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা: সরকার ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু করে। শুরুতে ৪ লাখ ৩ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাকে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ লাখ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ১২৩০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা: সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমঅধিকার ও সমর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০১ সালের প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন বাতিল করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ প্রবর্তন করে। পরবর্তীতে ২০০৫-০৬ অর্থবছর হতে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। শুরুতে ১ লাখ ৪ হাজার ১০৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারা ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জরিপভুক্ত সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে এবং এ খাতে ১৬২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি: সরকার দেশের জরিপভুক্ত সকল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় এনেছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। শুরুতে ১২ হাজার ২০৯ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষাথীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় মাসিক উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১০০০ টাকা প্রদান করা হতো। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রাথমিক স্তরে ৭৫০, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ এবং উচ্চতর স্তরে ১৩০০ টাকা হারে বরাদ্ধ প্রদান করা হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা লাখ এবং বরাদ্দ রাখা রাখা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা।

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) ফরিদ আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘মুজিববর্ষে (২০২১) চারটি বৃহৎ কর্মসূচির (বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি) আওতায় সারাদেশের ৮৮ লাখ ৫০ হাজার ভাতাভোগীকে জিটুপির মাধ্যমে সরাসরি ভাতা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ জানুয়ারি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (নগদ ও বিকাশ) মাধ্যমে ১১২টি উপজেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা সরাসরি ভাতাভোগীর নিকট প্রেরণের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ ভাতাভোগী বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছে। আমরা সাড়ে ৮৮ লাখ ভাতাভোগীকে জিটুপি (গভমেন্ট টু পারসন) পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছাতে ইতোমধ্যে ৭৩ লাখ ভাতাভোগীর তথ্য এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেসন সিস্টেম) সফটওয়ারে অর্ন্তভুক্ত করেছি। এখন সারাদেশে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা প্রদানের জন্য ভাতাভোগীর হিসাব খোলার কার্যক্রম চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ উদযাপন করছি। চলতি বছরেই চারটি কর্মসূচির শতভাগ ভাতা জিটুপি পদ্ধতিতে প্রদান করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।’

এদিকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে প্রায় ২ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রতিমাসে সম্মানী ভাতা হিসেবে ১২ হাজার টাকা করে প্রদান করছে সরকার। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদানের কার্যক্রমও সমাজসেবা অধিদফতর বাস্তবায়ন করে থাকে।
তথ্যসূত্র: সারাবাংলা