মেট্রো রেলে জুড়ল উত্তরা-আগারগাঁও

রেললাইন বসেছে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে মিরপুর সেনা আবাসিক এলাকা স্টেশন পর্যন্ত

মেট্রো রেল প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল রবিবার শেষ ভায়াডাক্টটি বসানোর মধ্য দিয়ে উত্তরার সঙ্গে যুক্ত হলো আগারগাঁও। এখন বাকি প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাউন্টার তৈরিসহ অন্যান্য কাজ, রেললাইন বসানো ও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। এরই মধ্যে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে মিরপুর সেনা আবাসিক এলাকার স্টেশন পর্যন্ত রেললাইনও বসানো হয়ে গেছে।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের দৈর্ঘ্য ১১.৭৩ কিলোমিটার। এই পথের পাঁচ হাজার ১৫২টি ভায়াডাক্টের সবই বসানো হয়ে গেছে। বাকি কাজ শেষ করে আগামী ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই পথে মেট্রো রেল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশের প্রথম মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক প্রতি মাসের ৪ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের অগ্রগতি গণমাধ্যমকে জানান। জানুয়ারি মাসের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৮০.২১ শতাংশ।

মেট্রো রেলের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল শেষ ভায়াডাক্ট বসানোর মধ্য দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণকাজের প্রায় ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে।

রাজধানী শহর ঘিরে উড়াল ও পাতাল রেল মিলে মোট ছয়টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ প্রকল্পটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার। এই পথের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১.৭৩ কিলোমিটারকে প্রথম পর্যায় হিসেবে ধরা হয়েছে।

বাস্তবায়নকারী কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম পর্যায় চালু হবে চলতি বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে।

এমআরটি-৬ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। অবকাঠামো নির্মাণকাজের উদ্বোধনকালে মেট্রো রেল চালুর সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। নানা প্রতিকূলতার কারণে চালু করার সময় ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি।

মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেলপথের পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল, পাইল ক্যাপ, আই গার্ডার, প্রিকাস্ট, বক্স গার্ডার সেগমেন্ট, পিয়ারহেড নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। গত মাসেই ১১.৫৮ কিলোমিটারে ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছিল। বাকি ছিল ১৫০ মিটার। গতকাল সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ৩৭৫ ও ৩৭৬ নম্বর পিলারের ওপর শেষ ভায়াডাক্ট বসানোর মধ্য দিয়ে ১১.৭৩ কিলোমিটার পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো। এ সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম ধাপের এই অংশে মোট ৯টি স্টেশনের সব কয়টির ছাদ ও স্টিল কাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে, তৈরি হয়েছে প্ল্যাটফর্মও। বাকি আছে রেললাইন বসানো, প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাউন্টারসহ অন্যান্য কাজ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের পুরো কাজও বাকি আছে। টঙ্গী সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে দিয়াবাড়ী রিসিভিং সাবস্টেশনে। সে জন্য এরই মধ্যে ডেসকোর উত্তরা সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। মূল গ্রিড থেকে রিসিভিং সাবস্টেশনে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন হয়েছে। পল্লবীতে বিদ্যুতের আরেকটি সাবস্টেশন তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। এই সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন কাজের পরীক্ষা চলছে।

গত মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, রেল কোচের প্রথম চালানে পাঁচটি কোচ আগামী ২৩ এপ্রিল জাপানের কোবে বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে জাহাজে উঠবে। মোংলা বন্দর থেকে আনা হবে দিয়াবাড়ী ডিপোতে। জুলাই মাসের প্রথম থেকেই ঢাকায় রেল কোচগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালানো শুরু হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে মেট্রো রেলের প্রথম পর্যায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসেই ঢাকায় মেট্রো রেলের উদ্বোধন হবে।

মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এমআরটি-৬ প্রকল্পের পুরো লাইনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তবে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রথম পর্যায় চালু করার জন্য উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।

মেট্রো রেলের কোচ নির্মাণ করা হয়েছে জাপানে। নির্মাণের পর কোচগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখার জন্য ঢাকা থেকে সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের জাপানে যাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে প্রতিনিধিদলটি যেতে পারেনি। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জাপানি একটি কম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছে কোচগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখার জন্য। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ দেওয়া কম্পানি কোচগুলো চালিয়ে দেখেছে।