১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রথম রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। স্থাপন করা হয় প্রথম ব্রডগেজ লাইন। রেলযুগে প্রবেশের পরবর্তী দেড়শ বছরে সারাদেশে রেললাইন বিস্তৃত এবং বহুগুণে প্রসার হয়েছে; কিন্তু প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সেবার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে যৎসামান্য। এবার বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম রেলপথকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের আওতায় আনছে সরকার।
বৈদ্যুতিক ট্রেন ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের প্রস্তাব রেলওয়ে থেকে পাঠানো হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে। এজন্য খরচ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মূলত ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়। নানা সংশোধন শেষে সম্প্রতি প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রেলওয়ে। পর্যায়ক্রমে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-জয়দেবপুরকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের আওতায় আনতে চায় সরকার। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম ৩৩৬.৮৯ কিলোমিটার এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর ১১.২৭ কিলোমিটার রেলপথ। সবমিলিয়ে ৩৪৮ কিলোমিটারজুড়ে আছে ৭০টি রেলস্টেশন। এ এলাকাকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের আওতাভুক্ত করা হবে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর কেন্দ্র করে এ রেলপথকে বৈদ্যুতিক সুবিধার আওতায় আনতে চাইছে সরকার। এতে যাত্রী ও পণ্যপরিবহনে খরচ কমবে। সাধারণত বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচলে খরচ খুবই কম, গতি থাকে বেশি। পরিবেশবান্ধব এই ট্রেনে ২০০ কিলোমিটার গতিতে এক সঙ্গে ১০টি ট্রেন চললে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক বৈদ্যুতিক কর্মকর্তা সাবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণত ধারণা করা হয়, ট্রেন চালাতে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ সম্ভব কিনা। আসলে এটি একটি ভুল ধারণা। ট্রেন চালনায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার, তা খুবই সামান্য। এজন্য দেশে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। ডিজেলের তুলনায় বিদ্যুতে খরচ অনেক কম।
জানা গেছে, বৈদ্যুতিক রেলপথ চালুতে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর, টঙ্গী-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী-খুলনা, আখাউড়া-সিলেট এবং ঈশ্বরদী-পার্বতীপুরের ব্যাপারে রেল পরিকল্পনা করেছে। সংস্থাটি বলছে, বৈদ্যুতিক ট্রেন ডিজেলচালিত ট্রেনের তুলনায় ২০-৩০ ভাগ বেশি পরিবেশবান্ধব।
গত শতাব্দীতে চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মতো অনেক দেশ বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করেছে। বৈদ্যুতিক ট্রেনের শুরুটা হয়েছিল ১৮৩৬ সালে স্কটল্যান্ডে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক রেলকার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। ব্যাপক পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে ১৮৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহায়ো আরআর প্রথম বৈদ্যুতিক রেলওয়ে চালু করে। পর্যায়ক্রমে এ ট্রেন যাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিবেশী ভারত ১৯২৫ সালে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস এবং কুরলার মধ্যে তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করেছিল।
বেশ কিছু কারণে বৈদ্যুতিক ট্রেন গণপরিবহনের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে- সীমিত শক্তি ব্যয়, প্রাকৃতিক শক্তি-সম্পদ সংরক্ষণ, স্বল্প শব্দ, পরিবেশবান্ধব কার্যপ্রণালি, কম যান্ত্রিক অবক্ষয়, সমমানের ওজনের জন্য অধিক শক্তি, অধিক গতি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং আরও অনেক সুবিধা।
বিভিন্ন গবেষণায় এটি নিশ্চিত হয়েছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদ্যুতিক ট্রেন হতে পারে উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেমের (বিপিএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিপিএসের উৎপাদনক্ষমতা বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য যথেষ্ট। এ ট্রেন ব্যবস্থা দেশের জনগণের যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনবে।
তথ্যসূত্র: আমাদের সময়