এখন পুকুর, খাল-বিলের প্রয়োজন নেই মাছ চাষ করতে। স্বল্প জায়গা ও ঘরের ভেতরে আধুনিক প্রযুক্তি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। বর্তমানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ির আঙ্গিনায় শুরু হয়েছে মাছ চাষ।
নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সিরাজগঞ্জের পৌর এলাকার সরকার পাড়ার তুষার আহম্মেদ ও চর-রায়পুর গ্রামের রিপন সরকার সফল হয়েছেন। কম খরচে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল হওয়ায় নিজ এলাকা পেরিয়ে এখন পুরো জেলায় মৎস্যজীবী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তারা।
তুষার ও রিপনের সফলতা দেখে জেলার শিক্ষিত বেকার যুবকরা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সেক্টরে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন প্রত্যাশা তাদের। এরইমধ্যেই তাদের হাত ধরে জেলায় নতুন পদ্ধতিতে মাছ চাষে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
একদিকে যেমন দেশি মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে আমিষের জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রতি বছর পুকুর খনন করতে গিয়ে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এ পদ্ধতিতে চাষ করতে যেমন নতুন করে পুকুর খননের প্রয়োজন হবে না, তেমনি খাল-বিল কিংবা নদী-নালারও প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানে স্বল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্ভব।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের বিষয়ে তুষার আহম্মেদ বলেন, ইউটিউব চ্যানেলে মাছ চাষের ভিডিও দেখে তার মনে আগ্রহ জন্মে। নতুন এ পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তিনি রাজশাহী থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রায় এক বছর আগে নিজ বাড়ির ঘরের মেঝেতে ৯০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন হাউজ তৈরি করেন।
এতে তার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এ কাজের অর্থ ও সহযোগিতা করেন তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম। এরপর সেখানে দেশীয় প্রজাতির শিং, কৈ, মনোসেক্স তেলাপিয়া, কই ও পাঙ্গাস মাছের ২৫ কেজি পোনা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। মাছের পোনা ও খাবার কেনা বাবদ তার খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে মাছগুলো ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে সেই হাউজে পুনরায় একই প্রজাতির মাছগুলো চাষ হচ্ছে। এই মাছগুলো আগামী মাসে স্থানীয় বাজারে ৩ লাখ টাকার বেশিতে বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তুষার আহম্মেদ।
তিনি আরও বলেন, রেনু ছাড়ার সাতদিনের মধ্যে পানি জীবানুমুক্ত এবং প্রবায়োটি এর মাধ্যমে পানি তৈরি করা হয়। এরপর নিয়মিত ফিড খাবার এবং পানির গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। পানির অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চিটাগুড় ব্যবহার করা হয়। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে এবং মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করতে হবে বলেও জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহেদ আলী বলেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় মাছ চাষ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে অনেকে উপকৃত হচ্ছে। কম পুঁজিতে অধিকতর লভবান হওয়ায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের। আগ্রহীদের সব ধরনের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ