ইউটিউব দেখে বিট রুট চাষে সাফল্য

সুমন বলেন, ‘এসএসসি পাশ করে বাসায় বসে ছিলাম। করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, তাই ভাবলাম বসে থাকার চেয়ে কিছু করি। এ জন্য আট কাঠা জমি বর্গা নিয়ে বিট রুট চাষ শুরু করি।’এসএসসি পরীক্ষার পর দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু হওয়ায় বাড়িতেই ছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামের সুমন হক। পড়াশোনা না থাকায় অলস কাটছিল তার সময়।

সময় কাটানোর উপায় হিসেবে বেছে নেন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবকে। সেখান থেকেই পেয়ে যান আয়ের পথ।

ভিডিওতে বিট রুট চাষ দেখে মাঠে নেমে পড়েন সুমন। আট কাঠা জমি বর্গা নিয়ে ফসল উৎপাদন করে পান সাফল্যও।

সুমন হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে যখন আমি বিট রুটের বীজ সংগ্রহ করে বপন করি, তখন আমাকে নিয়ে এলাকার অনেক লোক ঠাট্টা করত। সেই সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকেও কোনো সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পাইনি।

‘তবে এখন চিত্র অনেকটা ভিন্ন। অনেকে নতুন ধরনের এ সবজি ক্ষেত দেখতে আসায় এখন কৃষি অধিদপ্তরসহ স্থানীয়রা আমাকে খুব সহযোগিতা করছে। অনেকে এ সবজি চাষের জন‍্য আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসছে। আবার কেউ বীজ দেয়ার জন‍্য বলে যাচ্ছেন।’

সুমন আরও বলেন, ‘এসএসসি পাশ করে বাসায় বসে ছিলাম। করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাই ভাবলাম বসে থাকার চেয়ে কিছু করি। এ জন্য আট কাঠা জমি বর্গা নিয়ে এই চাষ শুরু করি। আল্লাহর রহমতে এখন আমি অনেক ভালো আছি।’

আরও জমি বর্গা নিয়ে ক‍্যাপসিক্যাম, রেড ক‍্যাবেজ ও স্ট্রবেরি চাষের চিন্তা করছেন বলেও জানান সুমন।

বিট রুটের গাছ দেখতে অনেকটা পালং শাকের মতো হলেও রঙে ভিন্নতা আছে। এ সবজির ভেতরের রং গাঢ় লালচে-বেগুনি। বীজ রোপণের দুই মাস পর মাটির নিচে হয় এ সবজি। প্রতিটির ওজন হয় গড়ে ২০০ গ্রাম থেকে আধা কেজি পর্যন্ত।

সালাদ, সবজি ও জুসের জন্য অভিজাত শ্রেণির হোটেলে এ সবজির বেশ কদর রয়েছে। পুষ্টিকর খাবার হিসেবেও এটি পরিচিত। দামও ভালো।

গ্রামের বাজারেই এ সবজির কেজিপ্রতি দাম ৩০০ টাকার কাছাকাছি।

বিট রুট চাষে অবশ্য খরচও বেশি। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো। তবে দাম বেশি হওয়ায় খরচ বাদে এক লাখ টাকার মতো আয় করা সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহাবুদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, বিট রুট একটি বিদেশি সবজি। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি। এটি ব‍্যাপকভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যাবে।

তিনি আরও জানান, এ সবজি দেশের মানুষের পুষ্টিগুণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে কেউ এমন পুষ্টিগুণ ও উচ্চমূল‍্যের সবজি চাষ করতে চাইলে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।