যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’র সমান্তরালে নির্মাণ করা হচ্ছে আরেকটি রেল সেতু। নতুন সেতুটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। গতকাল রবিবার উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে উত্তরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। বিশেষ করে রেলপথে সহজে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে এই সেতুটি বড় ভূমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে ডাবল লেনের ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতুটি। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে অর্থায়ন ও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাইকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হলেও ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন।
এই সেতু দিয়ে ১০০ কিলোমিটার বেগে একই সঙ্গে দুটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি সব ধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে সময় সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। এই সেতু দিয়ে দ্রুতগতিতে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। প্রথমে ব্রড গেজ ও মিটার গেজের চারটি ট্রেন দৈনিক আটবার পারাপারের পরিকল্পনা থাকলেও যাত্রী চাহিদা বাড়তে থাকায় সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় সেতুর ওপর চলাচলকারী ট্রেনের গতিসীমা।
দেশের রেলওয়ে খাতের বৃহৎ এক অবকাঠামো প্রকল্প হিসেবে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম দীর্ঘ সেতু ও এককভাবে দীর্ঘতম রেল সেতুটি। সংশ্লিষ্টরা জানায়, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণে সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুুক্তি ব্যবহার করা হবে। কংক্রিটের বদলে স্টিলের কাঠামোতে নির্মিত হবে এই সেতু। সেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ ৩০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে দুটি নতুন স্টেশন ভবন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রেলওয়ে ব্রিজ মিউজিয়াম, বাংলো, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ও বাসভবনের পাশাপাশি সেতুর জন্য নদীশাসনের কাজও করা হবে।
রেল সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে রেলওয়েকে ৪৩১ একর জমি হস্তান্তর করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় ১৬৮ একর স্থায়ীভাবে ও প্রায় ২৬২ একর জমি অস্থায়ীভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।