কৃষিপ্রধান দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের বেশির ভাগ কৃষিজাত পণ্য গ্রামেই উত্পন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে উত্পাদিত কৃষিজাত পণ্য দেশের জাতীয় আয়ের বেশির ভাগ জোগান দিয়ে থাকে। এ কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি দিনদিন মজবুত হচ্ছে। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতি আগের মতো নেই। গ্রামের লোকজন আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে গ্রামের মানুষ নিজ অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাতেন এখন আর সেই অবস্থা নেই। গ্রামের মানুষ কৃষিকে তাদের আয়ের বড় অবলম্বন হিসেবে ধরে নিয়েছে। আগে যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হতো তখন চাষিরা ফসল চাষ করে তেমন লাভবান হতেন না। বর্তমানে গ্রামের চাষিরা আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নত মানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফসলের উত্পাদন বহু গুণ বৃদ্ধি করে ফেলেছেন। ফসলের উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। দেশের মানুষ কৃষিজাত পণ্য সহজভাবে পাচ্ছেন। বিশেষ করে, ধান উত্পাদনে ইতিমধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ধান ছাড়াও সবজি উত্পাদনে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে কৃষকরা সবজি উত্পাদনে অনেক এগিয়ে গেছেন। দেশে এখন সবজি উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পর্যন্ত রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে। সবজি চাষের মতো মত্স্য চাষেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে মত্স্যচাষিরা মাছের উত্পাদন অনেক বৃদ্ধি করেছেন, যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উত্পাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এতে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। অন্যান্য খাতের মধ্যে পোলট্রি ও ডেইরিশিল্প অনেক এগিয়ে গেছে। পোলট্রিশিল্পে উত্পাদিত মুরগি দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। ডেইরিশিল্পে উত্পাদিত দুধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে শিক্ষিত তরুণ-যুবকদের অবদান সবচেয়ে বেশি; গ্রামীণ তরুণ-যুবকরা কৃষিকে আধুনিকায়ন করেছে। তাদের প্রচেষ্টার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তারা কৃষিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব তরুণ-যুবক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করাতে গ্রামে বেকার সমস্যার অনেক সমাধান হয়েছে। কারণ, কৃষিক্ষেত্রে বিশাল জনশক্তির চাহিদা থাকায় গ্রামের বেকাররা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা গ্রামীণ কুটিরশিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে ছোট ছোট শিল্প স্থাপন করেছেন। এতে গ্রামীণ বেকার মহিলারা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। গ্রামীণ কুটিরশিল্প উত্পাদিত পণ্যসামগ্রী দেশে-বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়াতে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। এখন আর তাদের অভাবের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে না। গ্রামের মানুষের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরে আসায় তাদের জীবনধারায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে গ্রামে জীর্ণশীর্ণ বাড়িঘর দেখা যেত, এখন সেখানে আধুনিক ডিজাইনের পাকা অথবা টিনের ঘর দেখা যায়। ঘরে ঘরে বিদ্যুত্, গ্যাসের লাইন রয়েছে। মোটর দিয়ে পানি তুলছে। এখন তাদেরকে পুকুরের পানি খেতে হয় না। ডিপ টিউবওয়েলের পানি দিয়ে তাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। গ্রামের মানুষের বিনোদনের জন্য রয়েছে ডিশের লাইন। ইন্টারনেট ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জীবিকার তাগিদে শহরে অথবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা বিদেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যে আরো বেশি সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। গ্রামীণ জীবনযাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। গ্রামে বসে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করা যাচ্ছে। উন্নত চিকিত্সাসেবা পাওয়া যাচ্ছে। গত এক দশক আগেও আমরা গ্রামের যে চিত্র দেখতে পেতাম তা এখন আর নেই। গ্রামে যেসব শিক্ষিত তরুণ-যুবক উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা অথবা বরাদ্দ দিয়ে উত্সাহিত করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে যেসব খাত রয়েছে সেগুলোকে সচল করে তুলতে হবে। গ্রামীণ কৃষি খাতকে আরো শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে গ্রামীণ অর্থনীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরাও আশা করব, আমাদের সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসবেন। মনে রাখতে হবে, গ্রামীণ অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে।