স্বাস্থ্যসচিব (সেবা) আব্দুল মান্নান গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন কোনো খবর নেই। কেউ কেউ আসে মৌখিক প্রস্তাব নিয়ে। আমি তাদের বলেছি, মুখে কোনো কথা হবে না, লিখিত আবেদন করতে হবে। লিখিত আবেদন করলেই আমরা তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে বিবেচনা করব।’
এর আগে চীনের সিনোভ্যাক কম্পানির
টিকার ট্রায়ালের জন্য চুক্তি হয়েছিল আইসিডিডিআরবির সঙ্গে। সরকারও অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু একপর্যায়ে সিনোভ্যাক ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশের আর্থিক অংশীদারি চায়। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত গড়ালেও কোনো সাড়া মেলেনি।
আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে এম জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রায়ালের বিষয়টি সরকারের সঙ্গে চীনা কম্পানির চিঠি চালাচালির পর্যায়ে রয়েছে। এর সমাধান হলে বলা যাবে বাংলাদেশে ট্রায়াল হবে কি না। এর আগে বলার কিছু নেই।’
এদিকে গতকাল গ্লোব বায়োটেকের কার্যালয়ে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহম্মেদ ও গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের উপস্থিতিতে গ্লোব বায়োটেকের টিকা মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্লোব বায়োটেকের গবেষণাপ্রধান ড. আসিফ মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রাণীর শরীরে সফল প্রয়োগ শেষ করেছি। এরপর এখন মানুষের শরীরে ট্রায়াল শুরু হবে। এই কাজের জন্য নিয়ম অনুসারে তৃতীয় কোনো পক্ষকে যুক্ত করতে হয়। সে জন্য আমরা আইসিডিডিআরবিকে বেছে নিয়েছি। আইসিডিডিআরবি এখন প্রয়োজনীয় প্রটোকল তৈরি করে সরকারের অনুমোদন নেবে। আর সরকারের অনুমোদন পেলে পরবর্তী সব কাজ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রাণীর দেহে প্রয়োগের পর্যায়ে ভালো ফল পেয়েছি। এখন আইসিডিডিআরবি মানুষের শরীরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চালাবে। আর আমাদের প্রতিষ্ঠান এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। আমরা মনে করি, অন্য যেকোনো ভ্যাকসিনের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই ভ্যাকসিন সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য ও উপযোগী হবে।’
তিনি বলেন, “এরই মধ্যে আমাদের টিকার নামকরণ করা হয়েছে ‘ব্যানকভিড’, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও করোনা রোধের সারমর্ম। প্রথম ধাপের ট্রায়াল বিশেষ কোনো কমিউনিটির লোকদের নিয়ে হবে না। এতে সাধারণ মানুষও থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সম্ভবত ৩০ থেকে ৫০ জনের মধ্যে ট্রায়াল চালানো হবে।”
তবে দেশীয় টিকা উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে আসা গ্লোব বায়োটেকের টিকার বিষয়ে আশাবাদী নন অনেকে।
এই গবেষণা শেষ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে কি না তা নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। আবশ্য আইসিডিডিআরবি এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আবার অনেকের মধ্যে আশা সঞ্চারিত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এত দিন গ্লোবের টিকার বিষয়টি আমাদের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। তবে এখন আইসিডিডিআরবি যুক্ত হয়েছে। আর আইসিডিডিআরবি যেহেতু চুক্তি করেছে, স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় তারা এই টিকা প্রাণীর শরীরে প্রয়োগের ফলাফল পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ করেই এতে সায় দিয়েছে।’