বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক ঘিরে নতুন স্বপ্ন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পাতাল পথ বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেল থেকে আনোয়ারা চৌমুহনী হয়ে কালাবিবি দীঘি পর্যন্ত তৈরি হবে ছয় লেনের এবং আনোয়ারা চৌমুহনী থেকে শিকলবাহা ক্রসিং (ওয়াই জংশন) পর্যন্ত তৈরি হবে চার লেনের সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধু টানেলের শতভাগ সুফল পাওয়া যাবে। ফলে টানেল ঘিরে দেখা দিয়েছে নতুন স্বপ্ন। টানেল এবং সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সাশ্রয় হবে জ্বালানি, বাঁচবে সময়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) দোহাজারি বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ‘কর্ণফুলী টানেল কানেক্টিং রোড’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ৪০৭ কোটি টাকায় শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে টানেল সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে। একই সঙ্গে টানেল থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত সড়কটি করা হবে চার লেনের। গত বৃহস্পতিবার ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। কাগজপত্র যাচাই করে সওজ থেকে চূড়ান্ত করা প্রতিষ্ঠানকে নোটিফিকেশন অব এগ্রিমেন্ট (এনওএ) দেওয়া হবে। এরপর নির্দিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাবে। ৪০৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি টাকা। ১৬০ ফুট প্রস্থের সড়কের ছয় লেনের মধ্যে দুই লেন হবে ধীরগতি এবং চার লেন হবে দ্রুতগতির যানবাহনের। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। দোহাজারি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেলের শতভাগ সুফল পেতে ৪০৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে মূল কাজ শুরু করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘টানেলকে কেন্দ্র করেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের যাত্রীদের অনেক সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।’ সমীক্ষা বলছে, কর্ণফুলী টানেল চালু হলে প্রথম বছরেই ৬৩ লাখ গাড়ি টানেল দিয়ে চলাচল করবে।

কিন্তু বর্তমানে এ চাপ সামলানোর মতো উপযুক্ত সংযোগ সড়ক নেই। তাই প্রস্তাবিত সংযোগ সড়কগুলো বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে তা যুক্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গেও যুক্ত হবে। মহাপরিকল্পনার আওতায় চট্টগ্রামে হবে বিদ্যুৎ হাব। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল। টানেল কেন্দ্রিক যোগাযোগের স্বপ্ন পূরণ হলে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের সড়কটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। সওজ সূত্রে জানা যায়, সড়ক পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হলে ঢাকার যানবাহনগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট হয়ে বন্দর টোল রোড-নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড-পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করলে পথ কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। তাছাড়া কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হতে সড়ক কমবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। দুই দিকে কমবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক। বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) পতেঙ্গার আউটার রিং রোডের কাজ চলছে। অন্যদিকে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক নির্মাণে ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল খনন কাজ উদ্বোধন করেন।

টানেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হচ্ছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন অর্থায়ন করছে প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণাকে সামনে রেখে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে।