রপ্তানিতে ইউটার্ন

করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে বিপর্যস্ত অবস্থা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। মহামারির প্রভাব রয়েছে দেশে দেশেই। লকডাউন তুলে নেওয়ায় অবশ্য মানুষজন কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। স্বাভাবিক না হলেও কাজকর্ম বাড়তে থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি আসছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানি আয়েও। অনেকটা নাটকীয়ভাবে জুলাইয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এ খাত।

করোনার কারণে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ঋণাত্মক ধারা থেকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে ১ শতাংশের মতো। প্রবৃদ্ধির হারে তা খুব বেশি না হলেও রপ্তানি আয়ে ধসের গত চার মাসের চিত্রের বিপরীতে এটি অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক। গত মাসে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৯১ কোটি ডলার। ৩৪৫ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ১৪ শতাংশেরও বেশি আয় এসেছে।

রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা একে করোনার থাবা থেকে বের হয়ে ট্র্যাকে ফেরা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কভিড-১৯-এর কারণে রপ্তানি প্রায় এক প্রকার থমকে থাকায় আয় অস্বাভাবিক কমে যায়। গত মাসে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে তা আবার আগের বছরগুলোর মাসওয়ারি ধারায় ফেরতের ইঙ্গিত বলে মন্তব্য তাদের। নতুন বাণিজ্য পরিস্থিতিতে নতুন অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও বলে আশাবাদী হচ্ছেন তারা।

কভিডের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে রপ্তানিতে এ রকম ধস নামে। এপ্রিলে কম হয়েছে ৮২ শতাংশ। মে মাসে এ হার ৬২ শতাংশ। রপ্তানি খাতে এত বড় ধসের ইতিহাস আর নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় আগে থেকেই করোনা শুরু হলেও দেশে মূলত মার্চ থেকে সরাসারি প্রভাব পড়তে শুরু করে। মার্চে ১৮ শতাংশ রপ্তানি কমে আসার মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ পায়। অবশ্য করোনার আগে থেকে রপ্তানি পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় একটু নাজুক ছিল। বছরের মাত্র দুই মাস আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেশি হয়েছে। বাকি ১০ মাসই আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি কম ছিল।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, কভিডের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সারা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য আবার বেশ গতি পাচ্ছে। শোরুমগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা চাহিদাও বেড়েছে। সে কারণে রপ্তানিতে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেল। ঊর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ সমকালকে বলেন, এখন হাতে যে পরিমাণ রপ্তানি আদেশ আছে তাতে আগামী দুই থেকে আড়াই মাস বেশ ভালো কাটবে। এরপর নতুন মৌসুম শুরু হবে। সাধারণত এ সময়কে লক্ষ্য করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আদেশ দিয়ে থাকেন ক্রেতারা। মূল রপ্তানি আদেশটা আসে সেপ্টেম্বরে। আগস্টেও কিছু রপ্তানি আদেশ আসে। তবে চলতি মাসে অন্যবারের একই সময়ের তুলনায় আদেশ কিছুটা কম জানিয়ে তিনি বলেন, এর সঙ্গে দর কম ধরা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জিং এ পরিস্থিতিতে তাই কম দামেই রপ্তানি আদেশ নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো হলেও এখনও ভীতি কাটেনি তাদের বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছর একই মাসে যা ছিল ২৮৯ কোটি ডলার। তবে সার্বিক রপ্তানি বাড়লেও প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশের মতো। নিট ক্যাটাগরিতে ৪ শতাংশ বেশি হলেও ওভেন ক্যাটাগরির পণ্য থেকে আয় কমেছে ৮ শতাংশ। সবমিলে মোট ৩২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে এ সময়। আগের বছরের একই সময় যা ছিল ৩৩১ কোটি ডলার।

অন্যদিকে কৃষি পণ্য, চিংড়ি এবং হিমায়িত মাছ, পাট ও ওষুধ রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে সার্বিক রপ্তানি বেশি হয়েছে। কৃষিতে ৩১ শতাংশ, ওষুধে ৪৯ শতাংশ ও পাটে রপ্তানি বেশি হয়েছে ৩৮ শতাংশ।