রেকর্ড গতিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মহামারি করোনা ভাইরাসের এ সংকটের মধ্যেও চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনে ১৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বৈধপথে দেশে এসেছে। প্রবাসীদের আয় পাঠানোর এ গতি অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাবে বাংলাদেশ। সংশ্নিষ্টদের মতে, করোনার প্রাদুর্ভাবে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশে^র বেশির ভাগ দেশ অচল হয়ে পড়ে। মার্চ-এপ্রিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়। কর্মহীন হয়ে পড়েন অনেক প্রবাসী শ্রমিক। পরে মে মাস থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে। আস্তে আস্তে বিশ্ব পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। অচলাবস্থা কাটিয়ে অনেক দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। খুলে দেয়া হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকায় গত মাস জুনে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। সামনে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুলাই মাস শেষে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনে ১৩৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা) যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্সের এ ধারা অব্যাহত থাকলে একক মাস হিসাবে চলতি জুলাইয়ে রেকর্ড ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে চলতি বছরের জুনে একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ করে বাংলাদেশ। তারও আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড ছিল গত বছরের মে মাসে।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা। করোনায় বৈশি^ক অর্থনীতির পরিস্থিতি অবনতি না হলে রেমিট্যান্স আরো বেশি হতো মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
গত অর্থবছরের মতো রেমিট্যান্স বাড়াতে চলতি অর্থবছরও এ খাতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং ওই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকার কাজ করছে।