বাসায় থেকে যেভাবে সুস্থ হলেন করোনায় আক্রান্ত অধ্যাপক

এক রোগীর সংস্পর্শে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিএসএমএমইউয়ের এই চিকিৎসক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কিভাবে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন সে কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দুই সপ্তাহ নিজের বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। উপসর্গ কম হলে এবং নিয়ম মেনে চললে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিজ বাসায় অবস্থান করেও সুস্থ হওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি। সে জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার, বিশ্রামের সঙ্গে কিছুটা শরীরচর্চা, প্রচুর পরিমাণে গরম পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক শহীদুল্লাহ। পাশাপাশি বাড়ির অন্যদের সুরক্ষার স্বার্থে রোগীকে একটি ঘরে সম্পূর্ণ আলাদা রাখার কথা বলেন তিনি। তবে জটিল রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এক রোগীর সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে বিএসএমএমইউয়ের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, “আমি বেশ কিছু রোগী দেখছিলাম। একজন রোগীকে দেখে জ্বর, টক্সিস মনে হচ্ছিল। ‘আপনার কি করোনাভাইরাস আছে?’ জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তারপর নিজে থেকে ওই রোগী করোনা পরীক্ষা করান।” অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এরপর আইইডিসিআর থেকে আমাকে জানানো হলো—স্যার, আপনার রোগীর করোনাভাইরাস পজিটিভ। আপনি একটু সাবধানে চলেন।’ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘আমারও কিন্তু কোনো উপসর্গ ছিল না। তার পরও আমি পরীক্ষা করালাম এবং বিকেলে জানালো হলো, আমারও করোনাভাইরাস পজিটিভ। তখন আমি নিজের বাসায় একেবারে কন্টাক্টলেস হয়ে গেলাম।’

তিনি বলেন, ‘আইসোলেশনের শুরুর সময়ে প্রথম দিকে আমার তেমন কোনো উপসর্গ ছিল না এবং এরপর একদিন সামান্য কাশি, সর্দি, সামান্য মাথা ব্যথা ছিল। তবে তাপমাত্রা তত বেশি ছিল না। সামান্য শরীর ব্যথা হয়েছিল। সেটা খুবই কম। আমার মেয়ের একটু জ্বর হয়েছিল, পাতলা পায়খানা হয়েছিল। আসলে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক তো সারা দুনিয়ায় আছে। আমি যখন আক্রান্ত হলাম, টেস্ট করে যখন আমি নিজেই পজিটিভ দেখলাম তখন আমি আসলেই একটু চিন্তিত হয়ে গেলাম যে আমি হাসপাতালে যাব, না বাসায় থাকব।’ বড় কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকায় বাসায় থেকে নিজের এবং মেয়ের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন বলে জানান শহীদুল্লাহ সিকদার।

ওই সময়ে খাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে আলাদা ঘরে থেকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, বিশেষ করে স্যুপ, জুস আর গরম পানি পান করেছি সব সময়; আদা চা খেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সব সময় চেষ্টা করেছি ভিটামিন সি ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খেতে। পেয়ারা, কমলা, লেবু, মাল্টা—এগুলো খেয়েছি প্রচুর পরিমাণে। এর সঙ্গে কালিজিরা এবং মধু সকাল-বিকাল খেয়েছি। প্রয়োজনে কিছু ওষুধও সেবন করেছি।’ অসুস্থতার দিনগুলোতে অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ পানি পান করেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সব সময় গরম পানি পান করেছি। আর সেটা পরিবারের সবাই। বেশি বেশি পানি পান জরুরি। কারণ টক্সিস পানির সঙ্গে বা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।’ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘অসুস্থ হলে বিশ্রাম নিতেই হয়। তাই বলে তিনি সব সময় শুয়ে থাকেননি। কিছু হালকা ব্যায়াম করেছেন, যাতে শরীর সচল থাকে।’ এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে আমি সপ্তাহে একটা করে ডিম খেতাম। কিন্তু কভিড-১৯ পজিটিভ আসার পর সপ্তাহে চারটা করে ডিম খেয়েছি। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে মানুষের সংক্রমণের শারীরিক ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। তাতে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে যেহেতু শারীরিক জটিলতা ছিল না, বাসায় থেকে পুষ্টিকর খাবার পাওয়া, নিজের মতো করে পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পরিচর্যার বিষয়টি সহজ ছিল। সে জন্য আমি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। হাসপাতালে গেলে কিছু পরিবেশগত রোগও অনেক সময় চলে আসে। অযথা হাসপাতালে গিয়ে বেশি ঝামেলা করাও বোধ হয় ঠিক নয়। কারণ যাঁর হাসাপাতালের সেবা প্রয়োজন, জরুরি, তিনিই হাসপাতালে যাবেন।’

শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘যদি কারো আগে থেকেই ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র বা কিডনিতে জটিলতা থাকে অথবা চিকিৎসার কোনো পর্যায়ে অন্য কোনো অসুস্থতা দেখা দেয়, তাহলে তার হাসপাতালে যাওয়া ভালো।’ তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, যদি নিয়মিত খাবার, স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং অন্যান্য বিষয়ে লক্ষ রাখা যায়, তাহলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। গরম পানির ভাপ নেওয়ার (স্টিম ইনহেলেশন) একটা বিষয় আছে। সেটাও আমরা করেছি।’ তবে বাসায় থাকলে প্রত্যেকের আলাদা কক্ষে থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এক ঘর থেকে রোগী যদি আরেক ঘরে না যায়, তাহলে ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়। কারণ এটা ছড়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কন্টাক্টে।’