মাস্ক বানিয়ে ভূমিকা রাখছেন তারা

দেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় পোশাকের পরিবর্তে দর্জিরা এখন মাস্ক তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন

সায়েদাবাদ সুপার মার্কেটের দোতলায় ছোট্ট একটা কক্ষে এতদিন গেঞ্জি-শার্ট তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বরগুনা সদর থানার পাতাকাটা গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব আলম। রাকিব আল গার্মেন্ট নামের ওই প্রতিষ্ঠানে তার মতো দর্জি আছেন আরও জনাদশেক। তারাও এতদিন শার্ট-প্যান্ট-গেঞ্জি সেলাই করতেন। সপ্তাহখানেক হলো ওইসব বাদ দিয়ে কেবল মাস্ক তৈরি করছেন তারা। করোনা ভাইরাসের কারণে আর বানাচ্ছেন না সেগুলো। করোনা প্রতিরোধকারী মুখোশ বা মাস্ক তৈরিই এখন তাদের কাজ। মার্কেটটিতে তার মতো এখন অনেকেই অন্যান্য পোশাক বাদ দিয়ে মাস্ক তৈরিতে নেমে পড়েছেন। আয়ও মন্দ নয়। প্রতিটি মাস্ক তৈরি করলেই পাচ্ছেন তিন টাকা। একেকজন দর্জি প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মাস্ক তৈরি করছেন। ফলে প্রত্যেকেরই প্রতিদিন আয় হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা। যারা বেশি সময় কাজ করছেন, তাদের আয় আরও বেশি। যত মাস্ক তত টাকা।

মাহবুব আলম বলেন, ‘তার গার্মেন্টের মালিক লিয়াকত হোসেন। কিছু দিন ধরে কেবলই মাস্কের অর্ডার পাচ্ছেন। কাজটা করাও বেশ সহজ। দু-তিন স্তরের কাপড় সেলাই করে দুপাশে দুটি রাবারের ফিতা জুড়ে দিলেই হয়ে যাচ্ছে মাস্ক। কোনোটি নীল, কোনোটি আকাশি, কোনোটি খয়েরি। দোকানটিতে এখন হরেক রঙের মাস্কের স্তূপ।

মাদারীপুরের জাফরাবাদ গ্রামের শহীদুল ইসলামও গেঞ্জি-শার্ট-প্যান্ট বাদ দিয়ে মাস্ক তৈরিতে নেমে পড়েছেন। সকাল ১০টা থেকে তিনি কাজ শুরু করেন, শেষ করেন রাত ১০টায়। খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। করোনার পর স্ত্রী-সন্তানদের জন্যও মাস্ক নিয়ে গেছেন। তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তারাও এখন মাস্ক ব্যবহার করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশাল মার্কেটটির বেশিরভাগ দোকানই ফাঁকা। নিচতলায় কিছু দোকানপাট খোলা আছে। দোতলার একাংশে পোশাক তৈরি করা হয়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করতেন দর্জিরা। করোনা পরিস্থিতি তৈরির পর সবাই অন্যান্য পোশাক বাদ দিয়ে মাস্ক তৈরিতে নেমেছেন। সায়েদাবাদ রেলক্রসিং সংলগ্ন ওই সুপার মার্কেটের তত্ত্বাবধায়ক খোরশেদ আলম জনি সমকালকে বলেন, ‘ধুলা ও নগরীর দূষণের কারণে রাজধানীতে অনেকে আগেই মাস্ক ব্যবহার করতেন। তখন একটি দোকানে স্বল্প পরিসরে মাস্ক তৈরি করা হতো। সপ্তাহখানেক হলো অন্যান্য দোকানেও মাস্ক তৈরি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু দোকানে কেবলই মাস্ক তৈরি হচ্ছে।’