পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হতে বাকি ১৫ শতাংশ কাজ

ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির সভা

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ হতে আর মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ বাকি। মূল পদ্মা সেতুর ৮৫ দশমিক ৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর পদ্মা সেতুর পুরো প্রকল্পের ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন হলেই বাস্তবে রূপ পাবে অনেক আকাক্সক্ষার পদ্মা সেতু। গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ফার্স্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় এ তথ্য জানানো হয়। পদ্মা সেতুসহ ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পের প্রতিটির অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয় এ সভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে সভায় জানানো হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৯১%, মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ১০০%, সার্ভিস এরিয়া-২ ১০০%, মূল সেতুর নির্মাণকাজ ৮৫.০৫% এবং নদীশাসনের কাজ ৬৬% সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬.৫০% সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ঝামেলা গেছে আপনারা জানেন। আমরা আনন্দিত অর্ধেকের বেশি কাজ হয়ে গেছে।

অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতি : মনিটরিং কমিটির সভায় ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্পেরই অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের প্রি-ইন্সপেকশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অংশে ভাগ করে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বেজার উদ্যোগে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুন্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল), সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এবং জাইকা ও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা হয়। বর্তমানে মহেশখালীতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২০টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ অন্যতম। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০.০২%। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন টার্মিনাল বাস্তবায়িত হয়েছে এবং গত ১৯ আগস্ট বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে। গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রারম্ভিক কাজ ও মালামাল সংগ্রহ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তা ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুমদখলের কাজ ৯০.৩৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণকাজ গড়ে ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৮.৮৪% ও আর্থিক অগ্রগতি ৬২.৫৫% সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২১.৯৩% ও আর্থিক অগ্রগতি ৩০.২২%। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল-গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩৩%, আর্থিক অগ্রগতি ২৩.৯৩%। প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। দেশের যে কোনো নদীতে সেতু নির্মাণের আগে সেই নদীর চরিত্র সম্পর্কে জানার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীতে ব্রিজ বা কোনো কিছু করতে গেলে আমাদের কিন্তু নদীর চরিত্রটা কেমন, বর্ষাকালে কী রূপ ধারণ করে, শীতকালে কী রূপ ধারণ করে এগুলো জেনে নিয়ে করা উচিত। নদীকে শাসন করতে গেলে সে শাসন সে মানবে না। সব নদী সব শাসন মানে না। সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পদ্মা নদীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতুটা করার সময় নদীশাসন করে আমি কিন্তু নদী ছোট করতে দিইনি। পদ্মা নদীর চরিত্র সম্পর্কের কারও জানা নেই। এ নদীটা অসম্ভব ভাঙনপ্রবণ। এখানে বাঁধ দিয়ে ছোট করতে গেলে এই নদী মানবে না। আমাদের ব্রিজটাই বড় করতে হবে। ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি প্রকল্প ছাড়াও অন্য বড় প্রকল্পগুলো মনিটর করতে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটি’কে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কতগুলো বড় বড় প্রজেক্ট আছে। সেগুলোর কয়েকটা আমরা ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমাদের আরও অনেক প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেগুলোও মনিটর করব। সরকারের ধারাবাহিকতার সুফল তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যখন সরকারের ধারাবাহিকতা থাকে না তখন প্রতিটি কাজ নষ্ট হয়। টানা তিনবার আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে অন্তত তারা আমাদের এটুকু সুযোগ দিয়েছে। যে আমরা পরপর তৃতীয়বার সরকারে এসেছি। তাতে আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো বাস্তবায়নও করতে পারছি এবং মানসম্মতও করতে পারছি। বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।