পল্লী সড়ক উন্নয়নে কাজ পাচ্ছেন ৪৪ হাজার নারী

আগামী জুলাই থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি

দেশের ৮৮ হাজার ৯২০ কিলোমিটার পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এতে নিয়োগ দেওয়া হবে ৪৪ হাজার ৪৬০ জন দুস্থ নারীকে। এর মাধ্যমে হতদরিদ্র অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পাবেন তাঁরা। ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩ (আরইআরএমপি-৩)’ শীর্ষক প্রকেল্পর আওতায় এসব সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পল্লী সড়কগুলো সারা বছর চলাচল উপযোগী থাকবে এবং ৪৪ হাজার ৪৬০ জন দুস্থ নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এটি প্রকল্প এলাকার সহজ এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণে সুবিধা এবং গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দারিদ্র্য হ্রাসে আরইআরএমপি প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৬৪টি জেলার চার হাজার ৪৪৬টি ইউনিয়নের ৪৪ হাজার ৪৬০ জন দুস্থ নারীর মাধ্যমে পল্লী সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩ (আরইআরএমপি-৩)’ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র মতে, এ প্রকল্পে নারী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং নারীপ্রধান পরিবারের নারী শ্রমিক, ভূমিহীন বা শূন্য দশমিক ৫ একরের কম জমির মালিকানাসম্পন্ন এবং মেরামতের জন্য তালিকাভুক্ত সড়কের কাছে বসবাসকারী নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

প্রকল্প সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অতি দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির সূচনা হয়েছিল। সে সময় লক্ষ্য ছিল খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখা। কিন্তু গ্রামীণ দুস্থ নারীদের দারিদ্র্য কমাতে বছরব্যাপী কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৮৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা), কেয়ার বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়নে প্রায় চার হাজারটি ইউনিয়নে পল্লী রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় এলজিইডি কর্তৃক ২০০৮-১৩ মেয়াদে জিওবি অর্থে ‘রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড রোড মেইনটেনেন্স প্রগ্রাম’ (আরইআরএমপি) শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ মেয়াদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এলজিইডি কর্তৃক আরইআরএমপি-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়।

সূত্র মতে, পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির শুরু থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৪০ জন অতি দরিদ্র নারী কর্মী ওই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৯৬৭ জনের (৮৯.৪৬%) অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটে। ২০০৮ সালে দেশে অতি দরিদ্রের হার ছিল ১৭.৬ শতাংশ, যা হ্রাস পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১১.৩ শতাংশ।

গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা।