বাংলাদেশের পাওনা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা (৬০ মিলিয়ন ডলার) শিগগির পরিশোধ করবে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রে সফররত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের অনুরোধে জাতিসংঘ এই টাকা দ্রুত পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে।
সেনাপ্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল তৎক্ষণাৎ ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন। আর বাকী অর্থ অল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন।
বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএসপিআর জানায়, সেনাপ্রধান গত সোম ও মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওই সময়ে তিনি অর্থ পাওনার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে পৌঁছালে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন তাকে স্বাগত জানান। পরে তিনি সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ মিশনের কর্মপরিধি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের পরিকল্পনার কথা জানান।
এরপর, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের সামরিক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কর্লোস উমবার্তো লতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সামরিক উপদেষ্টা বিভিন্ন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব ও মানবিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়া, তিনি বিশ্বে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেনাপ্রধান বাংলাদেশ থেকে একজন ফোর্স কমান্ডার নিয়োগের প্রস্তাব দেন। কর্লোস উমবার্তো লতে অতি শিগগির বাংলাদেশ থেকে একজন ফোর্স কমান্ডার নিয়োগের আশ্বাস দেন। সেনাপ্রধান বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, স্পেশাল ফোর্স এবং র্যাপিডলি ডেপ্লয়েবল ব্যাটালিয়ন মোতায়েনেরও প্রস্তাব দেন।
এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের সামরিক উপদেষ্টা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একজন কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে শান্তিরক্ষা মিশনের ফোর্স জেনারেশন প্রধান হিসেবে নিয়োগপত্র হস্তান্তর করেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩১ বছরে এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশকে নির্বাচন করা হলো।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সামরিক উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।
এরপর সেনাপ্রধান জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব অপারেশনাল সাপোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল লিসা এম বাটেনহেইমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে সেনাপ্রধান জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছে বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্য ৬০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের অনুরোধ করেন। সেনাপ্রধানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল তৎক্ষণাৎ ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করেন এবং অবশিষ্ট অর্থ স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দেন।
সফরকালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জাতিসংঘের পিস অপারেশনসের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জন পিয়েরে ল্যাক্রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে সেনাপ্রধান ফরাসি ভাষাভাষী দেশগুলোতে বাংলাদেশের সেনা মোতায়েনের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করেন। বিশেষ করে, চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে সেনা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক প্রস্তুতির ব্যাপারে অবহিত করেন।