বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ রবিবার। ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিট এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ‘স্পেস এক্স’-এর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী যান ফ্যালক-৯-এর সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক-৫ বুস্টারের মাধ্যমে এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজেদের স্যাটেলাইটের স্বত্বাধিকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। ১১৯ দশমিক ১০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে অবস্থান নেওয়া এই স্যাটেলাইটে ২৬ কেইউ ব্যান্ড ও ১৪ সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এই অর্জনের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন বিষয়ে গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের এই অর্জনের বর্ষপূর্তি ১২ মে হলেও প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকায় এটা পিছিয়ে ১৯ মে এর উদ্যাপন অনুষ্ঠান ও সেবা বিপণন কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চুক্তির কাগজ নেবেন টিভি চ্যানেল মালিকরা এবং ওই দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের সব টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার শুরু করবে। যদিও এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালানো হয়েছে। ওই দিন এই স্যাটেলাইট ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচ সেবাও চালু হবে।”
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর গ্রাহকপর্যায়ে পরীক্ষামূলক সেবা শুরু হয়। ওই দিন দেশে অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবল (সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন) চ্যাম্পিয়নশিপ এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক যাত্রা সম্পর্কে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘এক বছর আগে উৎক্ষেপণ হলেও আমরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেসের কাছ থেকে এটি বুঝে পেয়েছি গত নভেম্বরে। নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর বেশ কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর প্রস্তুতিতেও সময় লেগেছে। টিভি চ্যানেলগুলো আগে যে দামে ব্যান্ডউইথড কিনতো এ ক্ষেত্রেও সেই দামই দেবে।
সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবছর এক কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ হয়। এখন নিজস্ব স্যাটেলাইটের কারণে এ টাকা দেশেই থাকবে।
ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, ব্যাংকের এটিএম বুথ আর অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ মে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ এই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথড ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সব এটিএম বুথ কোনো ধরনের ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে। এতে এ সেবায় সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর কয়েকটি প্রদর্শনীও করা হবে। প্রকাশ করা হবে স্মারক ডাকটিকিট। এ ছাড়া হাতিয়ার ভাসান চরে যেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কথা রয়েছে, সেখানে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন ও ই-এডুকেশন সেবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম দেখানো হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা নিতে অন্যান্য দেশের আগ্রহ সম্পর্কে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফিলিপাইন ও নেপাল ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথড কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা চালু সহজ হবে।
বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের পরনির্ভরশীলতার অবসান ঘটাচ্ছে। ভিডিও ট্রান্সমিশন, ভি-স্যাট, প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, পয়েন্ট টু পয়েন্ট কানেকশন-এসব সেবা সহজ হতে চলেছে। এর মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সুবিধা মিলবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিশ্বের অভিজাত দেশগুলোর কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে।’