বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরি : হতদরিদ্রদের ৫ টাকায় চাল ৩ টাকায় গম দেবে সরকার

দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি চাল ও গম যথাক্রমে ৫ ও ৩ টাকায় সরবরাহ করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তা আইন-২০১৮ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইন কমিশন থেকে একটি সুপারিশ করা হয়েছে।

খসড়া আইনের তফসিল-১ ও ধারা ৮ এ বলা আছে, অন্য কোনোভাবে পুনরায় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তার যোগ্য পরিবারের প্রতিটি সদস্য ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি চাল ৫ টাকা ও গম ৩ টাকা এবং ২০ টাকায় প্রতি লিটার ভোজ্য তেল প্রাপ্য হবেন। পরবর্তী সময় প্রদানকৃত খাদ্য বা খাদ্যশস্যের মূল্যে ভর্তুকীকৃত অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকারের থাকবে।

খসড়া আইনে বলা আছে, সংবিধান অনুযায়ী পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রম বৃদ্ধি সাধন, খাদ্য সংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তার উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণ, কৃষিবিপ্লবের বিকাশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য।

খসড়ায় আইন কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য। সংবিধান অনুযায়ী মৌলিক চাহিদাগুলো হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা। সংবিধানের এ দায়িত্ব পালন করতে সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে। এছাড়া সরকার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ভিয়েনা ঘোষণা, ১৯৯৩ সালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং মানবাধিকার চুক্তি হিসেবে খাদ্য অধিকার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুষ্টিমান বজায় রাখতে ছয় মাস থেকে তিন বছরের শিশুদের উপযুক্ত খাবার ৫০০ কিলোক্যালরি ও ১২-১৫ গ্রাম প্রোটিন, তিন-ছয় বছর পর্যন্ত শিশুর তৈরি খাবার ও নাশতা ৫০০ কিলোক্যালোরি ও প্রোটিন ১২-১৫ গ্রাম। অপুষ্টিজনিত ছয় মাস থেকে তিন বছরের শিশুদের ৮০০ কিলোক্যালরি ও ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৈরি খাবার ৪৫০ কিলোক্যালরি ও ১২ গ্রাম প্রোটিন, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭০০ কিলোক্যালরি ও ২০ গ্রাম প্রোটিন এবং অন্তঃসত্ত্বা মা ও দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়ের জন্য ৬০০ কিলোক্যালরি ও ১৮-২০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।

খসড়া আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে খাদ্য পরিকল্পনায় বলা হয়েছে— দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং জাতীয়, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় খাদ্যনিরাপত্তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করবে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো জনগণের খাদ্যের জোগান ও পুষ্টিমাত্রা, সমন্বিত খাদ্য শৃঙ্খলার প্রতিটি পর্যায়ে খাদ্যনিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান, খাদ্য ও খাদ্যশস্য উৎপাদন, খাদ্যের প্রকৃতি ও খাদ্যশস্যের ধরন অনুযায়ী নিরাপত্তার মানদণ্ড, উচ্চমান ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ এবং তা উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণে কৃষক, মত্স্যজীবী খামারি ও খাদ্য ব্যবসায়ী কর্তৃক নিরাপত্তার মানদণ্ড, উচ্চমান নিশ্চিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণকরণ।

খসড়ার চতুর্থ অধ্যায়ের ৮ ধারায় ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, খাদ্য সহায়তার যোগ্য পরিবারের সদস্যপ্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে খাদ্য বা খাদ্যশস্য তফসিল-১ এ বর্ণিত ভর্তুকি মূল্যে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে হবে। ৯-এর (ক) উপধারায় বলা আছে, গর্ভকালীন সময় এবং সন্তান জন্মের পর এক বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে পুষ্টিমান বজায় রাখার নিমিত্তে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের মাধ্যমে তফসিল-২ এর বর্ণিত খাদ্য প্রাপ্ত হবে।

খসড়ার ১২ ধারায় অতিদরিদ্র ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা আছে, এ আইনের আওতায় প্রকল্পগুলো বা অন্য কোনো সমপর্যায়ে ভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী, দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

খাদ্য সহায়তাযোগ্য পরিবারের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে ১৬ ধারায় বলা হয়, সরকার বিভিন্ন সময়ে ১৪ ধারা অনুসারে জরিপের মাধ্যমে শহরাঞ্চল ও গ্রামঞ্চলে খাদ্য সহায়তার যোগ্য পরিবারের তালিকা প্রণীত বিধির আলোকে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করবে। খসড়ার ২৮ ধারা খাদ্যশস্যের মূল্য সম্পর্কে বলা আছে, সরকার উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্য ও খাদ্যশস্যের স্থিতিশীল সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে।

কর্মক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রোগ্রামটা এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত, যাতে মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-২) আহমেদ ফয়সল ইমাম বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তা আইনটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি আইন। এরই মধ্যে আইনের একটি খসড়া তৈরি করে তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হচ্ছে। আইনটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রণয়ন করা হবে বলে জানান তিনি।