রফতানিতে ধারাবাহিক উন্নতি

 

রফতানি আয়ে ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে আগস্ট ছাড়া গত অর্থবছরের শেষের দিক থেকে চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ চার মাস পর্যন্ত রফতানি আয় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেশি হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে অক্টোবরে গত বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ রফতানি বেশি হয়েছে।
ধারাবাহিক এ উন্নয়নের নেপথ্যে রয়েছে রফতানি তালিকার প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক খাতে গত ৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সংস্কারের সুফল। দুই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ সংস্কারের ফলে এ দেশের পোশাকের প্রতি বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া ক্রেতারা ফিরছেন। সম্প্রতি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের লড়াই এই গতিতে কিছুটা শক্তি জুগিয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে মোট এক হাজার ৩৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ২১৫ কোটি ডলার। শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। এই আয়ের ৯৪৪ কোটি ডলারই এসেছে পোশাক রফতানি থেকে। এ খাতের আয় আগের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে একক মাসের হিসাবে গেল অক্টোবরে রফতানি বেশি হয়েছে ৩১ শতাংশ। ৩৭১ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়েছে গত মাসে। গত বছরের অক্টোবরে রফতানির পরিমাণ ছিল ২৮৪ কোটি ডলার। অক্টোবরের এই আয় একক মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রফতানি বৃদ্ধির এ সংবাদে অনেক খুশি। ব্যাংকক থেকে সমকালকে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর যে সব ক্রেতা বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন তারা আবার ফিরছেন। গত ৫ বছরে পোশাক খাতে ব্যয়বহুল যে সংস্কার অগ্রগতি তাতে নতুন ক্রেতাদেরও দৃষ্টি কেড়েছে এ দেশের পোশাক খাত। এর ফলে কয়েক মাস ধরে রফতানি বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। দীর্ঘদিন এই সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।
সম্প্রতি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ থেকেও সুবিধা পাওয়ার কথা জানান বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, বিদ্যমান রফতানি আয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের বাড়তি একটা অংশ আছে। তবে এখনও সেটা উল্লেখযোগ্য নয়। কারণ, পোশাক রফতানির প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। রাতারাতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পণ্য নিয়ে গেছেন ব্যাপারটা এমন নয়। আগামী কয়েক মাসে দেশটির নতুন ক্রেতাদের রফতানি আদেশ আশা করছেন তিনি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, পোশাকের বাইরে উল্লেখযোগ্য রফতানি পণ্যের মধ্যে বেশি হারে রফতানি বেড়েছে কৃষিপণ্যের। আগের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৮০ শতাংশ। সিরামিক সামগ্রীর রফতানি বেড়েছে ২২২ শতাংশ। হোম টেক্সটাইলের রফতানি বেড়েছে ৩ শতাংশের কিছু বেশি। অন্য বড় পণ্যের মধ্যে চামড়ার জুতার রফতানি বেড়েছে ৭ শতাংশের মতো। মোট ২২ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের চামড়ার জুতা রফতানি হয়েছে। ওষুধের রফতানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। প্রায় সাড়ে চার কোটি ডলারের ওষুধ রফতানি হয়েছে এ সময়। টেরিটাওয়েলের রফতানি ৫০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ কোটি ডলার। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে চিংড়িসহ হিমায়িত পণ্যের ১৩ শতাংশ রফতানি কমে হয়েছে ২০ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ২৩ কোটি ডলার। চামড়া ও চামড়া পণ্যে কমেছে ১৯ শতাংশ। ৪৩ কোটি ডলারের রফতানি ৩৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। পাট ও পাটপণ্যের রফতানি কমেছে ১৬ শতাংশ। রফতানি হয়েছে ২৯ কোটি ডলারের পণ্য। আগের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ডলার।