নরসিংদীর শিবপুরে বিদেশি ফল রাম্বুটান ও মাল্টা চাষে সাড়া ফেলার পর নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে মেক্সিকান ড্রাগন ফল। প্রথমবারের মতো সাড়ে সাত বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের বাগানের আবাদ করেছেন আরিফুল ইসলাম মৃধা। তিনি শিবপুর উপজেলা পরিষদেও চেয়ারম্যানও। উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পুবেরগাঁও গ্রামে গড়ে তোলা এ বাগানে ড্রাগন চারার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।
২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা এই বাগানের প্রতিটি গাছে আসা ড্রাগন ফল পাকতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করেছেন আরিফুল ইসলাম মৃধা। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নরসিংদীর আবহাওয়া ও মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় যে কেউ ড্রাগন চাষ করে সফলতা অর্জন করতে পারে।
আরিফুল ইসলাম মৃধা কালের কণ্ঠকে জানান, রাজধানীর খামারবাড়ির আওতায় উন্নত ফল উদ্ভাবনে জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প এবং নাটোরের হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ড্রাগন ফলের তিন হাজারেরও বেশি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এসব চারা দিয়ে সাড়ে সাত বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন ড্রাগন ফলের বাগান। সাদা, লালসহ মোট তিন ধরনের ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে বাগানটিতে। শ্রমিকের মজুরি, গোবর সার প্রয়োগ, ড্রাগন চারা বেড়ে ওঠার জন্য এক হাজার দুই শ সিমেন্টের খুঁটি, গাড়ির এক হাজার দুই শ পরিত্যক্ত টায়ার, নিরাপত্তার জন্য বাগানে কাঁটাতারের বেড়া ও ফুল পরাগায়নের জন্য বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা করতে গিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বাগানে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক টাকা ব্যয় হয়েছে শ্রমিক মজুরি হিসেবে।
শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রথম দিকে বাগান তৈরি করতে এককালীন খরচ একটু বেশি মনে হলেও নিয়মিত খরচ খুব বেশি নয়। বছরের সাত থেকে আট মাসই ড্রাগনের ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি ফল যদি ওজনে ৫০০ গ্রামের ওপরে হয় তাহলে ৫০০ টাকা কেজি দরে বাগানেই এই ফল বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছি। ওজনে ৫০০ গ্রামের নিচে হলে তিন থেকে চার শ টাকায় বিক্রি করা যাবে।’ বছরের বেশির ভাগ সময়ই ফল পাওয়া যাওয়ায় ড্রাগন চাষে সফলতা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘বাগান তৈরির পর থেকে স্থানীয় মানুষের উত্সুক দৃষ্টি ছিল বাগানের প্রতি। ফুল ধরার পর থেকে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলছিল। এখন ফুলটি ফলে পরিণত হওয়ার খবরে প্রায় প্রতিদিনই শিবপুরসহ আশপাশের উপজেলা থেকেও আগ্রহী মানুষ ড্রাগন বাগান পরিদর্শন, ব্যয় ও রোপণ পদ্ধতি জানতে ছুটে আসছে। চারা উৎপাদন হলে আগামীতে ড্রাগনের বাগান আরো সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা আছে।’
কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া ভাষ্য মতে, সাধারণত চারার বয়স এক বছর না হলে ড্রাগন ফলের ফলন পাওয়া যায় না। আট মাসের মাথায়, অর্থাৎ মে মাসের শুরুতেই আরিফুল ইসলাম মৃধার বাগানের ড্রাগনের প্রায় প্রতিটি চারায় ফুল আসতে শুরু করায় সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছিল। এখন তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এই এলাকার আবহাওয়া ও মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী বলেও প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ব্যস্ত জনপ্রতিনিধি হয়েও ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলায় আগ্রহী হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে যুবকরা লেখাপড়ার পর চাকরি না পেলে বসে বসে বেকার সময় পার করে। কৃষিকাজে নামতে তারা লজ্জাবোধ করে। ড্রাগন চাষ শৌখিন কৃষিকাজ ও লাভজনক নিঃসন্দেহে। আমার বাগান দেখে কোনো বেকার যুবক যদি ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয় তাহলে আমার বাগান করা স্বার্থক হবে। বাকি জীবনটা কৃষিকাজ নিয়ে কাটাতে চাই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. লতাফত হোসেন বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে এই প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যানের ড্রাগন ফল বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যেকোনো ফলের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি এই ফল চাষ করে সফলতা অর্জন সম্ভব। এ জন্য অনেকেই এখন ড্রাগন চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। আগ্রহী চাষিদের ড্রাগন চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ড্রাগন চারা একটানা ২৫ বছর ধরে ফল দিয়ে থাকে। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফল ও চারা বিক্রি সম্ভব।’