মোটরসাইকেল উৎপাদনে প্রণোদনা আসছে

মোটরসাইকেলের চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। পাশাপাশি রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রস্তুতি নিতে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ১০ বছর নাগাদ দেশে বার্ষিক ১০ লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎপাদনের শুরু থেকে পাঁচ বছরের কর সুবিধা ও প্রণোদনাসহ নানা সুযোগ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়নে একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয় মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ নীতিমালা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে মতামতের ভিত্তিতে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও স্থানীয় বিক্রেতারা একই ধরনের হ্রাসকৃত কর সুবিধা পাবেন। মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে কর সুবিধা থাকবে। নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তারা কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া বাজার সম্প্রসারণ ও রফতানি উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে। কাঁচামাল আমদানির অনুমতি প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হবে। রফতানিমুখী শিল্পে নির্ধারিত ঋণপত্র বা বিক্রয় চুক্তির বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা থাকবে। রফতানিতে সহায়তা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মোটরসাইকেল উৎপাদনে সিসির ঊর্ধ্বসীমা উম্মুক্ত করা হবে। রফতানিমুখী কারখানা বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা পাবে। এ ছাড়া পরীক্ষামূলক বাজারে ছাড়তে নতুন মডেলের মোটরসাইকেলের নমুনার শুল্ক্ক সুবিধা দেওয়া হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে নানা সুবিধা দেওয়া হবে। ভেন্ডর উন্নয়ন ছাড়া কোনোভাবেই স্থানীয় পর্যায়ে মোটরসাইকেল উৎপাদন সম্ভব নয়। মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ভেন্ডর উন্নয়নে নিজস্ব অথবা যৌথ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সুবিধা থাকছে। ভেন্ডর বা সহযোগী শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা, ভ্যাট মওকুফ ও কম শুল্ক্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ভেন্ডর উন্নয়নে স্থানীয় যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা যাচাই করতে

গবেষণা কার্যক্রম করা হবে। এ ছাড়া যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী নির্বাচন করে তাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হবে।

নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়নে গবেষণা করা হবে, যাতে যন্ত্রাংশের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় কমানো হবে। সংযোগ শিল্পের উন্নয়ন, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের গুণগত মান পরীক্ষা ও সনদের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পরিষদ গঠন করা হবে।

দেশে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করছে। কিছু মোটরসাইকেল আমদানি ও সংযোজন করা হচ্ছে। নয়টি প্রতিষ্ঠান দেশে মোটরসাইকেল কারখানা স্থাপন করছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে মোটরসাইকেল তৈরি করছে রানার। এ ছাড়া জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডার কারখানায় শিগগিরই মোটরসাইকেল উৎপাদন হবে। বাজাজ, হিরো ও টিভিএসসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানি উৎপাদনে যেতে কারখানা স্থাপন করছে। এখন দেশের বাজারে বছরে সাড়ে তিন লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরে মোটরসাইকেলের চাহিদা ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

এ বিষয়ে রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, নীতিমালা এমন হওয়া প্রয়োজন- যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পান। দীর্ঘমেয়াদে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এই উৎপাদনমুখী শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে। গত কয়েক বছর ধরে সুবিধা দেওয়া হলেও তা ধারাবাহিকভাবে বছর বছর পরিবর্তন করা হয়। এ কারণে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। নীতিমালা বাস্তবায়নের সুবিধাগুলো নূ্যনতম ১০ বছরের জন্য দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, নীতিমালায় সংযোজনকারীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, আবার উৎপাদনকারীকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদনে বেশি জোর দেওয়া উচিত। নীতিমালা তৈরির বিষয়ে উদ্যোক্তারা মতামত দিয়েছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করলে মোটরসাইকেল উৎপাদন উৎসাহিত হবে।

দেশে মোটরসাইকেলের উৎপাদন ২০২১ সালে পাঁচ লাখ ও ২০২৭ সালে ১০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দামে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মানসম্মত মোটরসাইকেল সরবরাহ করা হবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।