বাংলামতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন ফুলবাড়ীর চাষিরা

উৎপাদন ব্যয় কম, আশানুরূপ ফলন পাওয়াসহ বাজারে ধানের ভালো মূল্য পাওয়ায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর চাষিরা বাংলামতি (ব্রি ধান-৫০) সুগন্ধী ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বোরো মৌসুমে বোরো ধান চাষের পাশাপাশি উপজেলার ২৫০ জন কৃষক ১৫ একর জমিতে বাংলামতি সুগন্ধী ধান চাষ করে সাফলতা পেয়েছেন।
জানা যায়, সুগন্ধী ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ চাষিদের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিবিকে), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফান্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তায় পেইস প্রকল্পের আওতায় উপজেলার আলাদিপুর ও বেতদীঘি ইউনিয়নের ৫১৯ জন কিষাণ-কিষাণীকে দুইদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সুগন্ধী ধান চাষের উন্নত পদ্ধতি, রোগবালাই দমন, বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণসহ উৎপাদিত ধান বাজারজাতকতরণের ওপর আলোকপাত করা হয়।
সুগন্ধী বাংলামতি ধান উৎপাদনকারী উপজেলার দক্ষিণ আলাদিপুর গ্রামের চাষি মানিক সরকার জানান, সুগন্ধী ধান উৎপাদনের আগ্রহ নিয়ে দুইদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩৩ শতাংশ জমিতে বাংলামতি (ব্রি ধান-৫০) চাষ করেন। প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পোকামাকড় দমনের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়াসহ ফলন ভালো হয়েছে। ধান উৎপাদন হয়েছে ২৫ মণ। উৎপাদন খরচ হয়েছে আট হাজার ৫০০ টাকা। উৎপাদিত ধান ২২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে লাভ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।
উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের ফরিদাবাদ আদিবাসীপাড়ার কিষাণী ময়না সরেন জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ৩০ শতাংশ জমিতে বাংলামিত চাষ করেন। এতে ফলন হয়েছে ২০ মণ। উৎপাদন ব্যয় হয়েছে সাত হাজার ৫৭৬ টাকা। ১৯ হাজার ১৯৯ টাকায় ধান বিক্রি করে লাভ করেছেন ১১ হাজার ৬২৩ টাকা। আগামী বছরে আরো বেশি জমি নিয়ে ব্রি ধান-৫০ চাষ করার পরিকল্পনা করছেন।
গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র সংস্থার সুগন্ধী ধান উৎপাদন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. লিয়াকত আলী বলেন, বিজিকে সংস্থার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রচলিত পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে চাষিদের বের করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ফলন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাষিদের আয় বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। বাজারজাত করণে কার্যকরী যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে চাষিদের উৎপাদন ফসলের চাহিদানুযায়ী মূল্য নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রাণ ও সিটি গ্রæপের এজেন্ট এবং আমবাড়ি ইস্তিয়াক অটো রাইস মিলে চাষিরা ধান বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামীম আশরাফ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে বাংলামতি আবাদে চাষিদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা এ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। চাহিদা থাকায় আগামীতে উপজেলায় কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ জমিতে এ ধান চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।