বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও চালু করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক বা ই-পাসপোর্ট। উন্নত প্রযুক্তির ই-পাসপোর্টের জন্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, দশ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্নিয়ার ছবি এবং ডিজিটাল স্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হবে। আবেদনকারীদের পাসপোর্ট একটা বিশেষ সেন্টার থেকে প্রিন্টিংয়ের পর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এবং দূতাবাসগুলোতে পাঠানো হবে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও দূতাবাস থেকে আবেদনকারীরা সহজে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে জার্মানি।
ই-পাসপোর্ট চালু করতে চার হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ মঙ্গলবার উত্থাপন করা হচ্ছে। একনেকে অনুমোদন পেলে মন্ত্রণালয়ের অধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর আগামী মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্টে চালু হলে বিশ্বে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্নিষ্টরা।
সংশ্নিষ্টরা জানান, জার্মান প্রতিষ্ঠান ভেরিডস গ্যাব এইছ বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট তৈরিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফরকালে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। ই- পাসপোর্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে সরাসরি জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এর আওতায় সরকার তিন কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সংগ্রহ করবে। ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট আমদানি করা হবে। দেশে উৎপাদন করা হবে দুই কোটি ৮০ লাখ ই-পাসপোর্ট। নিরবচ্ছিন্নভাবে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন সার্ভার, রাউটার, সুইট, কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ক্যামেরা, ই-পাসপোর্ট রিডার, প্রিন্টিং মেশিন স্থাপন করা হবে প্রকল্পের আওতায়।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বেসরকারি বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) গাইডলাইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) পদ্ধতি প্রর্বতন করে। কিন্তু এমআরপি ব্যবস্থায় পাসপোর্টের জালিয়াতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে দশ আঙুলের ছাপ ডাটাবেজে সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই। এ পদ্ধতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা ধরা পড়ায় ই-পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর মতামত দিতে গিয়ে এক প্রতিবেদনে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (বিকল্প দায়িত্বে) শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে সর্বশেষ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। এতে একদিকে বাংলাদেশি পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়বে, অন্যদিকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সরকার সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালে মধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রচলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সে বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উত্থাপন করা হচ্ছে।