মিশ্র ফল-সবজি চাষী আব্দুল হান্নানের নতুন চমক আম বাগানে ডাটা চাষ

নওগাঁর রাণীনগরে আম বাগানে একই সাথে ডাটা চাষ করে চমক দেখিয়েছেন বর্গাচাষী আব্দুল হান্নান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিশ্র ফল ও সবজি জাতীয় ফসল চাষে স্থানীয় ভাবে সফল চাষী। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি একই জমিতে নানান জাতের ফসল চাষ করে চাষী পর্যায়ে তিনি এখন বেশ পরিচিতিও লাভ করেছেন। তার কাছে স্থানীয় চাষীরা নানান ধরণের পরামর্শ নিয়ে একই জমিতে অধিক ফসল ফলানোর লক্ষ্যে রকমারি সবজিসহ ফলজ জাতীয় বৃক্ষের চাষ করছেন।

চাষী হান্নানের পৈত্রিক জমিজমা তেমন না থাকলেও অন্যের জমি লিজ নিয়ে একই জমিতে হরেক রকম সবজি চাষ যেমন, ডাটা শাক, পালং শাক, খিরা, শষা, ফলজের মধ্যে আম ও ডাব গাছ লাগিয়ে এলাকায় বেশ সারা জাগিয়েছেন। নিজেই পরিশ্রম করে প্রয়োজনের তাগিদে দু’একজন শ্রমিক নিয়ে এই ফসলগুলোতে নিবির পরিচর্জা করে থাকেন তিনি।

চলতি রবি মৌসুমে আম চাষের পাশাপাশি আম বাগানে ডাটা শাক থেকেই খরচ বাদে তিনি প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছেন।

তার দাবি, সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও সবজি চাষের জন্য মানসম্পন্ন জমি সুলভমূল্যে পাওয়া গেলে এই ব্যবসা করে ভাল লাভবান হওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই তার দেখাদেখি একই জমিতে রকমারি চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় চাষীরা। কৃষি অফিস থেকে উপযুক্ত পরামর্শ পেলে অল্প জমিতেই অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। আর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় ৩৫টি আম গাছের সুস্বাদু পাকা আম বিক্রয়ের জন্য বাজারে আনা হবে বলে জানান তিনি।

 

জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হান্নান (৩৮) প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশুনায় আর বেশি এগোতে পারেননি। পিতা-মাতার সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনার লক্ষ্যে অল্প বয়সেই সংসার পরিচালনার দায়ভার কিছুটা তার কাঁধে আসে। অল্প পরিশ্রমে কিভাবে বেশি উপার্জন করা যায় ঠিক সেই পরিকল্পনা সামনে রেখে অন্যান্য কাজ-কর্মের পাশাপাশি সবজি চাষের দিকে মনোযোগ দেন তিনি।

ধীরে ধীরে এক পর্যায়ে আব্দুল হান্নান প্রতিটা সবজি চাষে সফলতা পেতে শুরু করেন। পরে এর পরিধি বাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সে অন্যের জমি স্বল্প টাকা দিয়ে লিজ নিয়ে রকমারি চাষ শুরু করেন।

২০১৪ সালে দূর্গাপুর গ্রামের মৃত রহিসুল আলম খানের চক-কুজাইল মৌজার রতনডারি সংলগ্ন প্রায় আড়াই বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেয়।

শুরুতেই তিনি ওই জমিতে গম চাষের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে আম গাছ, ডাব গাছ লাগানো শুরু করে। গম কাটা-মাড়াই শেষে একই জমিতে ডাটা শাক, পালং শাক, বাঙ্গি, ঢেড়শসহ রকমারি জাতের নানান সবজি ও ফলজ গাছ লাগিয়ে চাষী আব্দুল হান্নান এখন সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

ফসলী জমিতে বসত বাড়ি নিমার্ণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত কাজ করার কারণে দিনদিন যখন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় এক জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল ফলায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষক আব্দুল হান্নান।

তিনি জানান, আমি কৃষকের ঘরের সন্তান। লেখাপড়া তেমন করতে না পাড়লেও কৃষি কাজে মনোযোগ আমার সব সময় বেশি। নিজের জমি-জমা তেমন না থাকলেও বর্গাচাষী হিসেবে আমি অনেক দিন ধরেই নানান জাতের সবজি চাষ করে আসছি। বেচে-কিনে যা হতো ও সবাইকে দিয়ে-থুয়ে কিছু সঞ্চয় করে ১৪ সালের দিকে ১০ বছরের জন্য একটি জমি লিজ নেই। সেখানে একই জমিতে সবজিসহ ফলজ গাছ লাগিয়ে প্রতি বছর আমার আয় ভালই হচ্ছে। এ বছরেই আমি আরও জমি লিজ নিয়ে আমার কৃষি জাতীয় কর্মকাণ্ডের প্রসার আরো বৃদ্ধি করবো।
তার সফলতা দেখে আশপাশের চাষীরাও তাদের জমিতে রকমারি জাতের সবজি ও ফলজ বৃক্ষ চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।

বড় শিমলা গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান কৃষক আব্দুল হান্নানের মিশ্রফল ও সবজি চাষে সাফলে তিনি আশান্তিত হয়েছেন। তাই ১০ কাঠার আম বাগানে ডাটা লাগিয়েছেন। ইতিমধ্যে আম বাগানের সেই ডাটার ফলও ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষক ইসমাইল হোসেন।

তিনি বলেন- আমার মতো আরো অনেক কৃষক আব্দুল হান্নানের মিশ্র চায়ের সফলতা দেখে তাদের জমিতে রকমারি জাতের সবজি ও ফলজ বৃক্ষ চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, আব্দুল হান্নানের মিশ্র বাগানের কথা আমি জানার পর বাগানটি পরিদর্শন করেছি। ব্যক্তিগত উদ্দোগে তিনি অনেক ভাল করেছেন। একই জমিতে নানান জাতের সবজি চাষ করে তিনি এখন লাভবান হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই রাণীনগর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে নানা ধরণের দিকনিদের্শনামূলক পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি আগামীতে তিনি আরো ভাল করবেন।