দেশের প্রথম টানেলের পর এবার চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এটি ভবিষ্যতে চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ হিসেবে কাজ করবে। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৮১ কোটি ১৭ লাখ এবং কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) ঋণ থেকে ৭৮৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এ রোড ও রেল সেতু নির্মাণের মাধ্যমে জোড়াবিহীন রেল পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল বাধা দূর হবে। সেই সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বৃহৎ করিডোর তৈরি করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এটি।
‘কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ’ নামের নতুন এ প্রকল্পটির প্রস্তাব করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।
এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ। সভায় প্রকল্পের প্রস্তাবিত বিভিন্ন অংশের ব্যয়সহ নানা বিষয় আলোচনা হবে।
সব প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
পিইসি সভার জন্য তৈরি কার্যপত্রে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল থাকায় জেলাটি জাতীয় শিল্প উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। শহরটি কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত।
কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সড়ক সেতু ও একটি পুরনো এবং দুর্বল রেল সেতু বিদ্যমান রয়েছে। এ রেল সেতুটি কালুরঘাটে অবস্থিত।
মিটারগেজ লাইনে সেতুটি ১৯৩১ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে এর সঙ্গে সড়ক সেতু যুক্ত করে রেল কাম সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা ক্ষয়প্রাপ্ত ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর কার্যক্ষমতাও কমেছে।
সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারে এবং যানবাহন ২০ মিনিট পরপর সেটি অতিক্রম করে। তাছাড়া ট্রেন চলার সময় সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সেতুর উভয় পাশে ব্যাপক যানজট লেগে যায়।
এ অবস্থায় বিদ্যমান সেতুটির পরিবর্তে নতুন রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি, তাইওয়ানের উয়িকন কোম্পানি এবং বাংলাদেশের এসিই কনসালটেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, এ সেতুটি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়। এ সময় কোরিয়ান কোম্পানি এসএমইসি’র সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব কোরিয়া (কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক) চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং প্রকল্পের অ্যাপ্রেইজাল সম্পন্ন করার জন্য কোরিয়া ২০১৭ সালে একটি অ্যাপ্রেইজাল মিশন পাঠায়।
মিশনটি গত বছরের ২৭ এপ্রিল ইআরডির সঙ্গে বৈঠক করে। ওই সভায় সরকার ও ইডিসিএফের মধ্যে মিউনিটস অব ডিসকাশন সই হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।