বর্জ্য পরিশোধনাগার হচ্ছে ১৪ চিনিকলে

বর্তমানে দেশের সরকারি মালিকানায় ১৫টি চিনিকল রয়েছে। এগুলোর বার্ষিক গড় উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। চিনিকলগুলোয় চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে চিটাগুড়, প্রেসমাড ও ব্যাগাস উৎপাদিত হয়। এর ফলে পরিবেশ দূষণকারী তরল বর্জ্য নির্গত হয়, যা অপরিশোধিত অবস্থায় নিকটবর্তী জমি বা জলাশয়ে পড়ে এগুলোর স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট করছে। এ থেকে উত্তরণে চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে সরকার। এর আগে একটি চিনিকলে শোধনাগার নির্মাণের পর এবার বাকি ১৪ চিনি কলে হবে এ শোধনাগার। এ লক্ষ্যে ৮৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিনিকলে চিনির পাশাপাশি চিটাগুড়, প্রেসমাড ও ব্যাগাস উৎপাদিত হয়। একই সঙ্গে এ থেকে প্রচুর তরল বর্জ্য নির্গত হয়। চিনিকলগুলোয় উৎপাদিত প্রতি মেট্রিক টন চিনির সঙ্গে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার লিটার বর্জ্য নির্গত হয়। এসব বর্জ্যে উচ্চমাত্রার বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (বিওডি) ও কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (সিওডি) থাকায় পানির অক্সিজেন মাত্রা কমে যাচ্ছে। এছাড়া পানিতে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী হাইড্রোজেন সালফাইড নিঃসৃত হয়। এতে আয়রন ও অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে পানির রঙ কালো বর্ণ হয় এবং জলজ প্রাণী, গৃহস্থালী কাজে ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে চিনিকল এলাকার জলাশয়, ফসলি জমি, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এ বর্জ্য পরিশোধন করে পরিশোধিত পানি সেচ ও কারখানায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ফলে পরিবেশ সুরক্ষাসহ ভূগর্ভে পানির ক্রমহ্রাসমান স্তর রক্ষা হবে। এজন্য সরকার প্রতিটি চিনিকলে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। চিনিকলগুলো হচ্ছে পঞ্চগড় সুগার মিলস লি., ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস, সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস, রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিলস, জয়পুরহাট সুগার মিলস, রাজশাহী সুগার মিলস, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস, পাবনা সুগার মিলস, কুষ্টিয়া সুগার মিলস, কেরু অ্যান্ড কোং সুগার মিলস, খুলনার মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস, ফরিদপুর সুগার মিলস, জামালপুরের জিল বাংলা সুগার মিলস এবং গাইবান্ধার রংপুর সুগার মিলস।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আগামীকাল অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জনা যায়, ২০০৯ সালে ১২ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী কারখানার বর্জ্য পরিশোধনে প্রতিটি কারখানায় ইটিপি স্থাপনের নির্দেশনা দেন। এছাড়া উচ্চ আদালতও ওই সময়ে দেশের সব শিল্প ইউনিটকে পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রথম নাটোরে চিনিকলে ইটিপি স্থাপন করা হয়। পরে ১৪টি চিনিকলে ইটিপি স্থাপনে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলো। প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হলে চিনিকল সংলগ্ন এলাকার মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে জলজ ও বায়ুম-লের ইকো সিস্টেমকে ভারি কণা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। কারখানা সংলগ্ন লোকালয় ও পরিবেশ বর্জ্যরে দুর্গন্ধ মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি চিনিকল সংলগ্ন কৃষিজমি, জলাশয় ও সেচের পানি কারখানার নির্গত ভারি বর্জ্য পদার্থ থেকে রক্ষা পাবে।