চট্টগ্রাম বন্দরে যোগ হচ্ছে রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন

দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে যোগ হচ্ছে ‘রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন’। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলপথে যেসব কনটেইনার ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে আসা-যাওয়া করে সেগুলো এই আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে দ্রুত ওঠানামা করা হবে। এত দিন রাবার টায়ার্ড ক্রেন (আরটিজি) নামের যন্ত্র দিয়ে এসব কনটেইনার ওঠানামা করা হতো। নতুন যন্ত্র যোগ হলে কনটেইনার ওঠানামার গতি বাড়বে এবং কম সময়ে বেশি কনটেইনার ওঠানামা সম্ভব হবে।

২২ কোটি টাকায় কেনা নতুন এই যন্ত্র জাহাজে করে গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আজ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আধুনিক এই যন্ত্রটির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই যন্ত্র দিয়ে ঘণ্টায় ২০ থেকে ২২ একক কনটেইনার ওঠানামা সম্ভব হবে এবং এতে সময় সাশ্রয় হবে। আর এত দিন আরটিজি দিয়ে এই কাজ করা হতো, এখন আরটিজিগুলো বন্দরের মূল কনটেইনার ওঠানামায় ব্যবহৃত হবে। এতে করে পণ্য ওঠানামায় আরো গতি পাবে।

তিনি বলেন, বন্দরের প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণের পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হচ্ছে। ৫১টি যন্ত্র ও যন্ত্রপাতির মধ্যে ৪৪টি যন্ত্র এরই মধ্যে কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। অনেক যন্ত্র এরই মধ্যে বন্দরে পৌঁছেছে। বাকি সাতটি যন্ত্র কেনার প্রক্রিয়াধীন আছে।

জানা গেছে, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) থেকে বোঝাই হয়ে রেলপথে ঢাকা কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে যায়। এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামা সব পণ্য চাইলেই কমলাপুর নেওয়া যায় না, এ জন্য বিদেশ থেকে পণ্য পাঠানোর আগে বিল অব লোডিংয়ে বন্দরে নামার স্থান (লোড পোর্ট) উল্লেখ থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইঞ্জিন সংকট, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ডুয়াল রেললাইন না থাকার কারণে একটি কনটেইনার পৌঁছতে ১২ থেকে ২০ ঘণ্টা লেগে যেত। এই সমস্যা সমাধানের পর এখন অনেক সময়ে কনটেইনার ঢাকায় পৌঁছছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুটি কনটেইনার ট্রেন কমলাপুর যাচ্ছে। আগের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং সড়কপথের তুলনায় খরচ অনেক কম থাকায় রেলপথে কনটেইনার পরিবহন কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু চাহিদামতো সেবা দিতে পারছে না রেলওয়ে। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৭৩ হাজার একক কনটেইনার চট্টগ্রাম থেকে পরিবহন হয়েছে। এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার একক এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৩৭ হাজার একক। অর্থাৎ ধাপে ধাপে কনটেইনার পরিবহন কিছুটা বেড়েছে।

জানা গেছে, এত দিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি কনটেইনার রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন বা আরটিজির মাধ্যমে রেল ওয়াগনে তোলা হতো, এতে বাড়তি সময় লাগত। আর আরটিজি সংকটের কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কনটেইনার ওঠানামা কাজে ব্যবহার করা যেত না।

চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, জাহাজ থেকে নামার পর কমলাপুর নিতে একটি কনটেইনার এখনো ৮ থেকে ৯ দিন লাগে। বেশির ভাগ আমদানিকারক কমলাপুরের বদলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকেই পণ্য ছাড় করছেন। একেবারে বাধ্য না হলে কেউ রেলপথে কনটেইনার নিতে চায় না।

তিনি বলছেন, বন্দর রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন চালু করলে কনটেইনার ওঠানামার গতি বাড়বে, কিন্তু পরিবহন যদি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সময় সাশ্রয়ী করতে না পারে তাহলে পুরোপুরি সুফল মিলবে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) আইসিডি পয়েন্টে নতুন রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই কাজ করা হচ্ছে সপ্তাহখানেক ধরে।