দশ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স

এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৭ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স বেড়েছে ২১ শতাংশের বেশি।

রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এবার অর্থবছর শেষে প্রবাসী আয় প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।

তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও রমজান ও ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা আরও বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন।যার ফলশ্রুতিতে অর্থবছরের শেষ দুই মাস মে ও জুনে বেশি রেমিটেন্স আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট এক হাজার ২০৮ কোটি ৮২ লাখ (১২.০৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এই অংক গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলের চেয়ে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের এই দশ মাসে প্রবাসীরা এক হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ (১০.২৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন।

সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে এসেছে ১৩২ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। মার্চ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৩০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বড় অংশই আছে তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে। কয়েক বছর আগে জ্বালানি তেলের দর পড়ে যাওয়ার পর রেমিটেন্স কমার পেছনে একে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছিলেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।

বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এখন ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে এর দর ছিল ৪০ ডলারের কিছু বেশি।

মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রবাসী আয় আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তেলের মূল্য হ্রাস এবং অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে দেশগুলোর বিভিন্ন নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আশানুরূপ ছিল না।

“পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটছে। তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। প্রবাসীরা এখন বেশি আয় করছে, যার ফলে বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারছেন।”

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রেমিটেন্স বেশ কমেছিল।অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ইতিবাচক ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।

“আমরা আশা করছি, এবার ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসবে।”

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বিদেশি মুদ্রা। দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম।

জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন মুহিত। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ডলার বিক্রি করেছে ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দরে।

রেমিটেন্স বৃদ্ধি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “পণ্য আমদানি বাড়ায় বাজারে এখন ডলারের চাহিদা বেশি। সে কারণে ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই রেমিটেন্স আনতে অতি বেশি উৎসাহী হয়েছে।

“বেশি টাকা পাওয়ায় প্রবাসীরাও বৈধ পথে টাকা পাঠাচ্ছেন। কার্ব মার্কেট এবং ব্যাংকে ডলারের দাম এখন সমান। সে কারণেই কোনো ঝুঁকি নেই ভেবে হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।”

রেমিটেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থায়। বৃহস্পতিবার দিন শেষে  রিজার্ভে ছিল ৩৩ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩২ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক ও রাকাব) মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ১ লাখ ডলার।

৩৯ বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার।