২০ জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন

দেশে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উত্পাদন বাড়ছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ২০ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উত্পাদিত হচ্ছে। নিরাপদ বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য আম উত্পাদিত হওয়ায় ইতোমধ্যে এ পদ্ধতি বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে আম উত্পাদিত হলেও ২২টি জেলা যথাক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল, জামালপুর, গোপালগঞ্জ, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে আমের আবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে আম উত্পাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন।

 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশে আম উত্পাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রধান গবেষক-জনক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, ২০১৪ সালে চীনের একটি কোম্পানি আমাদের গবেষণার জন্য কিছু ফ্রুট ব্যাগ প্রদান করে। পরে আমরা গবেষণা কেন্দ্রে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আম উত্পাদনে ভালো সাফল্য পেয়েছি। তিনি বলেন, সাধারণত একটি আম গাছে বিভিন্ন ধরনের যেসব কীটনাশক স্প্রে করা হয়, তার যে খরচ, তার চেয়ে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহারের খরচ সাশ্রয়ী। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বিষমুক্ত আম উত্পাদন সম্ভব এবং এতে আম বাগান মালিক বা চাষীরা অধিক বেশি লাভবান হন।

 

তিনি আরো বলেন, মুকুল থেকে আমের গুটির বয়স ৪০ দিন থেকে ব্যাগিং শুরু করতে হয়। ৫৫ দিন পর্যন্ত আমে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। সবজাতের আমেই ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আমে পোকার আক্রমণ বেশি হয় বলে মোট ব্যাগিং পদ্ধতির ৬০ থেকে ৬৫ ভাগই ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়। এ ছাড়া ফজলি ও আশ্বিনা আম ৬৫ দিন পর্যন্ত ব্যাগিং করা যায়।

 

তিনি বলেন, ওইবছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৮০ পয়সা দামের প্রতিটি ফ্রুট ব্যাগ প্রায় ৫০ হাজার ব্যবহূত হয়। এ ছাড়া রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি জেলায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার করেন বাগান মালিকরা।

 

ফ্রুট ব্যাগ পদ্ধতি ব্যবহারকারী নওগার জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিএম রহমান পলাশের মাধ্যমে এ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন, পরে তিনি নাটোরের নলডাঙ্গা থানার পশ্চিম মাধনগর কাঁজীপাড়ার আম বাগানে এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এ পদ্ধতির খরচ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কীটনাশক ব্যবহারে যে খরচ হয়, তার চেয়ে কমই খরচ হয়েছে। তবে ব্যাগ কিনতে টাকাটা একবারে লাগে আর কীটনাশক প্রয়োগ করলে বার বার আস্তে আস্তে টাকাটা খরচ হয়।

 

ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, বিষমুক্ত নিরাপদ আম উত্পাদনে এবার আমরা রাজশাহী বিভাগের স্কাউটদের হাতে কলমে ব্যাগিং পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এতে সহায়তা করছেন, রাজশাহী এগ্রোফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহবায়ক মো. আনোয়ারুল হক। প্রশিক্ষিত স্কাউট সদস্যদের নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাগানে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজা নাসরীন ও ক্রীড়া শিক্ষক মো. সালেহ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হামীম রেজা বলেন, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ফ্রুট ব্যাগ দেশেই উত্পাদনের কারখানা স্থাপন করতে পারলে দেশে বিষমুক্ত নিরাপদ আম উত্পাদনের খরচ আরো কমানো সম্ভব হতো। এতে করে দেশে বার্ষিক আম উত্পাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হতো।