পঞ্চগড়ে ভিটেমাটিতেও বিস্তৃত হচ্ছে চা বাগান

বাড়ির সামনে ১৬ শতক সুপারি বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চা চাষ শুরু করেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মহারাজাদীঘি এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম। এখন তার বাগানের পরিমাণ ৮৯ একর। ৪০ দিন পরপর মোট চা পাতা সংগ্রহ করেন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ১০০ কেজি। তাতে আয় হয় ৩৬ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। সদরের শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক ঘেঁষে বাড়ির সামনের ভিটায় পাঁচ শতকজুড়ে চা বাগান করেছেন ইয়াসিন আলী। দুই বছর বয়সী এ বাগান থেকে এর মধ্যেই তিনবার পাতা সংগ্রহ করেছেন তিনি।

পঞ্চগড় জেলায় অনেক বসতবাড়ির চিত্রই এখন এমন। নব্বইয়ের দশকে এ জেলাতে প্রথম ক্ষুদ্র পরিসরে সমতলে চা চাষ শুরু হলেও তা এখন ভিটেমাটি থেকে বাড়ির আনাচে-কানাচে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। স্থানীয় বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা তৈরি হওয়ায় চা চাষের পরিধিও দ্রুত বাড়ছে। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি ও অনুন্নত জেলা পঞ্চগড় এখন সবুজ চা বাগানে ভরে উঠেছে। এ চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোয় হচ্ছে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান।

নব্বইয়ের দশকে প্রথমে টবে, পরে পতিত জমিতে চা বাগান করা শুরু করেন পঞ্চগড়ের মানুষ। তবে ২০০১ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানি সেখানে চা চাষ শুরু করলে বাণিজ্যিক চা বাগানের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। জেলায় স্টেট পর্যায়ে আটটি (২০ একরের ওপরে), ক্ষুদ্রায়তন (স্মল হোল্ডার) ১৫টি (৫ থেকে ২০ একর) ও ২৮০ জন ক্ষুদ্র চা চাষী (শূন্য থেকে ৫ একর) পঞ্চগড় চা বোর্ডে নিবন্ধিত হয়েছে। তবে নিবন্ধনের বাইরে প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র পর্যায়ের চা বাগান রয়েছে। ২০১৭ সালেই ৪২০ দশমিক ২৩ হেক্টর জমি নতুন করে চা চাষের আওতায় এসেছে।

উত্তরবঙ্গে যে ২১টি নিবন্ধিত চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা রয়েছে, তার মধ্যে পঞ্চগড় জেলাতেই রয়েছে ১২টি। চাষীদের কাছ থেকে সবুজ পাতা কিনে চা তৈরি করে তারা। এ চা বিক্রি হয় দেশে চায়ের একমাত্র নিলাম বাজার চট্টগ্রামে। এ কারখানাগুলো চাষীদের ঋণ সহায়তাও দিচ্ছে।

চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র আরো জানায়, মার্চ থেকে নভেম্বর চায়ের উৎপাদন মৌসুম। পর্যায়ক্রমে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৪ সালে সবুজ চা পাতা উৎপাদন হয়েছে ৬৩ লাখ ২৭ হাজার ৪২৭ কেজি। ২০১৭ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৯ কেজিতে। চলতি বছর উৎপাদন গত বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পঞ্চগড় নর্থবেঙ্গল সেন্ট্রাল টি কারখানার ব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে প্রতি কেজি কাঁচা পাতা ২৪ টাকা দরে কেনেন তারা। প্রক্রিয়াকরণের পর চলে যায় চট্টগ্রাম।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সমতলে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় অত্যন্ত সম্ভানাময় এলাকা। চা চাষের উন্নয়নে তারা নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। চাষীদের নিয়ে কর্মশালা করা হচ্ছে। জেলার বিটিআরআই উপকেন্দ্রে পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও ফিল্ড ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।