নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সর্বত্র বর্তমানে উত্সবের আমেজে চলছে ইরি-বোরো ধান কাটা। এবার চাষের জন্য এখন পর্যন্ত পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল থাকায় ইরি-বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর পর এবার ইরি-বোরো ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন হওয়ায় এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ অবস্থায় এলাকার কৃষক পরিবারে বর্তমানে চলছে নব্বানের উত্সব। তবে বর্তমানে এখানে ইরি-বোরো ধান কাটতে তীব্রভাবে কৃষিশ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে এলাকায় কৃষকরা চরম দুঃচিন্তার মধ্যে পড়েছে। ধান কাটার মৌসুমে এখানে মজুর সংকট দেখা দেয়।
ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটা এবং কৃষকের ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজই এখানকার কৃষকরা মৌসুমি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল। মওসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দল বেঁধে এখানে কৃষি শ্রমিকরা আসে। এবারো মৌসুমি শ্রমিকের দল এসেছে। তাদের সংখ্যা খুবই কম। এমনিতে সব এলাকাতে ইরি-বোরো ধানে পাক ধরেছে। এ ধান কাটতে গিয়ে চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছে এলাকার কৃষক।
সেনবাগ পৌর এলাকার উত্তর শাহাপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মতিন বলেন, গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে তার জমিতে ধানে পুরোপুরি পাক ধরেছে। কিন্তু মজুরের অভাবে জমি থেকে ধান কাটতে পারছেন না। দুদিন আগে তিনি জনপ্রতি ৬শ’ টাকা হারে মজুরি দিয়ে পাঁচজন শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা মজুরিতে লোক পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, হঠাত্ করে কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়া এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে তিনি তার জমিতে এভার ভালো ফলন হওয়ায় খুবই খুশি। তারপরও তিনি ধান পেয়ে তার সব কষ্ট ভুলে গেছেন। একই কথা বলেছেন কাদরা এলাকার সুজা মিয়াসহ একাধিক কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, এ বছর সেনবাগ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও সেনবাগ পৌরসভা এলাকায় মোট ৯ হাজার পাঁচশ’ হেক্টর জমিতে এবার ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছে। বৈদ্যুতিক শ্যালো পাম্প এবং খাল-বিলের পানির উপর নির্ভর হয়ে এতো জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগেও সেনবাগ উপজেলায় আমন ফসল ছিল এলাকার কৃষকদের প্রধান ফসল। দীর্ঘদিন খাল সংস্কার না হওয়ায় এখন মাত্র ২শ’ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়। অথচ বিপরীত চিত্র দেখা যায় ইরি-বোরো ধান চাষে।
ধান কাটার মজুর সংকটের কথা স্বীকার করে সেনবাগ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ রেজাউল করিম ভুঁইয়া এ প্রতিবেদককে জানান, এ বছর ইরি-বোরো ধান চাষে এলাকার কৃষকরা সময় মতো সার-বীজ পাওয়ায় এবং চাষের জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পুরোপুরিভাবে ধান কাটতে আরো দুই থেকে তিন সাপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে তিনি মনে করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর পর এবার বোরো চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।