সাগরের তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ যাচ্ছে সন্দ্বীপে

দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এই দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমেরিন কেবল (সাগরের তলদেশ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার) স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। সাগর ও নদী দিয়ে ঘেরা সন্দ্বীপ উপজেলা আগামী জুন মাস থেকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গোপসাগরের তলদেশের ১০ ফুট নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার স্থাপনের কাজ শুরু করেছিল। প্রযুক্তিগত দিক থেকে জটিল এই কাজ ৪১ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সাগরের নিচ দিয়ে এই তার গেছে।

সাবমেরিন কেব্‌ল স্থাপন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) ইকবাল করিম প্রথম আলোকে জানান, সাগরের তলদেশে ৩৩ হাজার ভোল্টের দুটি কেব্‌ল স্থাপন করা হয়েছে। তার স্থাপনের জন্য চীনের একটি বিশেষায়িত জাহাজ থেকে ১০ ফুট দীর্ঘ এবং ৫ ফুট প্রস্থের একটি রোবট পানিতে নামানো হয়। রোবটটি সাগরের তলদেশের মাটি সরিয়ে তার বসায়। জাহাজে থাকা মনিটরের মাধ্যমে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এই কাজ তদারক করেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সন্দ্বীপে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সীতাকুণ্ডের ভূখণ্ডে ১০ কিলোমিটার এবং সন্দ্বীপের ভূখণ্ডে আরও ১৬ কিলোমিটার তার স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। সাগরের তলদেশ এবং দুটি উপজেলার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে যাওয়া মোট ৪২ কিলোমিটার তার চীন থেকে এসেছে।

এখন সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডে দুটি সাবস্টেশন এবং ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ শুরু হবে বলে জানান পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) প্রবীর কুমার সেন। তিনি বলেন, শুরুতে ১০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হবে। এর মাধ্যমে প্রথমে ১০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ পাবেন। সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বাড়ানোর পর সেখানে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। তবে সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য আলাদা প্রকল্প নিতে হবে। সন্দ্বীপ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ–সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

৮০ বর্গমাইল আয়তনের সন্দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় চার লাখ। এই দ্বীপ চট্টগ্রাম শহর থেকে নদী ও সাগরপথে ৫০ কিলোমিটার দূরে।

সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ মাহফুজুর রহমান বলেন, জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সন্দ্বীপবাসীর জন্য স্বপ্ন ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহের কারণে সন্দ্বীপের মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আসছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে কর্মসংস্থান বাড়বে।

পিডিবি সূত্র জানায়, সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ–সুবিধা দিতে ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাবমেরিন কেব্‌ল প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জেডটিটি’ নামের একটি কোম্পানি সাবমেরিন কেব্‌ল স্থাপনের কাজ পায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চীনের এসবি সাবমেরিন সিস্টেমস কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগিতা নিয়েছে।

সন্দ্বীপে এখন জেনারেটরের (জ্বালানি তেল দিয়ে চলে) মাধ্যমে মাত্র এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পায় আড়াই হাজার গ্রাহক। উপজেলা সদরের বাইরে বেশ কিছু পরিবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আবার অনেকে ছোট জেনারেটর দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় বিদ্যুৎ–সুবিধা পায়।