তিস্তার চরে মরিচ চাষে কৃষকদের সাফল্য

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রাম ইতিমধ্যে মরিচের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে মরিচ চাষ করে ওই এলাকার চাষি মঙ্গা জয় করে এখন স্বাবলম্বী। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে কাউনিয়ার মরিচ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মরিচের দাম পেয়ে চাষিরা এবার বেজায় খুশি। সরেজমিনে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে চর নাজির দহ, পল্লীমারী, চরচতুরা, প্রাণনাথ চর, বলভবিষু, চর সাব্দী, গোপী ডাঙ্গা, চর পাঞ্জরভাঙ্গা, চর গদাই, চর ঢুষমারা, পূর্ব নিজপাড়া, গনাই, চর গনাই, চর হয়বতখাঁ, চর আজমখাঁ, জিগাবাড়ী, চর রাজীব, সোনাতন, রামচন্দ্রপুরসহ তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরে মরিচের বামপার ফলন হয়েছে। এসব চরের চাষি আলু, গম, রসুন, পিয়াজের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে মরিচ চাষ করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২৫ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ১৮০ হেক্টর জমিতে এর মধ্যে বেশির ভাগ জমি তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে। তিস্তার চরাঞ্চলে পলি ও উর্বর দোআঁশ মাটিতে এবার মরিচের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ফলন ভালো ও অধিক দাম পাওয়ায় চাষিরা বেজায় খুশি। প্রণনাথ চরের কৃষক মজিবর মিয়া, জব্বার মিয়া, আক্কাস এ বছর অক্টবর-নভেম্বর ভাদ্র আশ্বিন মাসে এক বিঘা জমিতে ফরিদপুরী জাতের মরিচ চাষ করেছে, প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার কারণে তাদের ফলন ভাল হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতি মণ মরিচ ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। একই কথা জানালেন নাজির দহ গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন। তারা দুজনেই ২৫ শতক করে জমিতে মরিচ চাষ করেছে, শতকে ১ মণ করে মরিচ ফলিয়েছেন এবং ২৫ শতক জমির মরিচ বিক্রি করেছেন প্রায় ৩১ হাজার টাকা। বর্তমানে শীতের কারণে চাহিদা একটু কম হওয়ায় বাজারে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা টাকা দরে প্রতি মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। এলাকার চর নাজির দহ গ্রামের কৃষক মাহবুব মিয়া প্রাণনাথ চরের কৃষক মোফাজ্জল মিয়া জানান মরিচে তেমন রোগবালাই হয় না, হালকা সেচ ২-৩ বার, প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হয়। রোপরে ৬০ দিনের মধ্যেই ফলন ধরা শুরু হয়। তবে জাত পোকা, পচন ধরা ও পটবোরার জাতীয় রোগ হয়। তিস্তার জেগে ওঠা চরে মরিচ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই সঙ্গে সংসারেও ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। প্রানাথ চরের কৃষক কোরবান আলী জানান, তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় হাট-বাজারের চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহর থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত রফতানি হচ্ছে। তাদের অনেকের অভিযোগ তারা মরিচের ন্যয্য দাম পায় না, লাভবান হয় পাইকাররা। স্থানীয় কৃষকরা জানান, রংপুর অঞ্চলে মরিচ সংরক্ষণের জন্য সরকারি বা বেসরকারীভাবে কোনো হিমাগার না থাকায় প্রান্তিক চাষিরা বাধ্য হয়েও কম দামে মরিচ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পরিশোধিত বীজ, প্রয়োজনীয় সার কীটনাশক প্রয়োগ ও পরিচর্যায় কারণে চলতি মৌসুমে মরিচের বামপার ফলন হয়েছে। এ ছাড়াও তিস্তার জেগে ওঠা চরের জমিতে প্রচুর পলি পড়ায় এলাকার মাটির প্রকৃতি ও আবহাওয়া মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। এজন্য চাষিরা মরিচের ভাল ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছে। মরিচের রোগের জন্য ম্যানকোজেব গ্রুপের ওষুধ ২-১ বার সেপ্র করলেই হয়। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডক্টর মো. সরওয়ারুল হক বলেন আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর তিস্তার জেগে ওঠা চরে মরিচ চাষ ভালো হয়েছে।