মাত্র দেড় একর জমিতে সবজি চাষ করে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করেছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার চরদেহুন্দা গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান মাস্টার। এলাকায় তিনি ‘লাখ টাকার চাষি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও এগ্রিপ্লাস নামে একটি কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তায় মাত্র দেড় একর জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তিনি মাসে এক লাখ টাকা আয় করেন। কৃষক মতিউর রহমানের এ সাফল্যে পুরো এলাকার কৃষক তার পদ্ধতি অবলম্বন করে সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতি দিন বিভিন্ন এলাকার কৃষক মতিউর রহমানের জমি দেখতে আসেন। সরেজমিন জানা গেছে, কৃষক মতিউর রহমান শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন। গতানুগতিক আবাদে তেমন লাভ না দেখে কৃষিকে কীভাবে উন্নতি করা যায় অনেকদিন ধরে তিনি চিন্তা করছিলেন। চার মাস আগে এগ্রিপ্লাস কোম্পানির প্রতিনিধির পরামর্শে তিনি কৃষিতে সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মনোযোগী হন। তিনি দেড় একর জমিতে ফুল কপি, টমেটো ও বেগুন আবাদ করেন। এগ্রিপ্লাস চারা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। মাত্র তিন মাসেই তার জমিতে ভালো ফলন হয়। এখন পুরোদমে চলছে সবজি তোলার কাজ। এতে খরচ বাদে ৩ লাখ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রতি মাসে তার আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ টাকা।
মতিউর রহমান সবজি সুরক্ষার জন্য জমির উপরে জাল দিয়েছেন। কীটপতঙ্গের ক্ষতি এড়াতে জমিতে বসিয়েছেন ফেরোমন ফাঁদ। এ সবজি তোলার পর একই জমিতে তিনি ঢ্যাঁড়শ, করলা, ঝিঙ্গা ও শসা চাষ শুরু করবেন। এভাবে একই জমিতে সারা বছরই সবজির আবাদ চলবে। স্থানীয় সমাজকর্মী এম এ হানিফসহ কয়েকজন কৃষক জানান, লাখ টাকার চাষি প্রকল্পটি এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষক আবদুুল মজিদ ও বরজু মিয়া জানান, আগামি দিনে লাখ টাকার চাষি প্রকল্পে তারা অংশ নিতে চান।
এগ্রিপ্লাস লিমিটেডের ঢাকা রিজিওনাল সেশন ম্যানেজার আজহারুল ইসলাম ফকির রতন বলেন, একজন কৃষক দেড় একর জমিতে সবজি চাষ করে মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে খরচ কম এবং আয় বেশি হয়। এটি ‘লাখ টাকার চাষি’ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এ প্রকল্পে অংশ নিলে দেড় একর জমিতে সবজি চাষ করে মাসে লাখ টাকা আয় করা যায়। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় উন্নত জাতের সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। পরে এসব চারা কৃষকদের দেওয়া হয়। পোকা-মাকড়ের ক্ষতি ঠেকাতে জমিতে ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়।
কৃষক মতিউর রহমানের সবজি জমিতে বাম্পার ফলনের খবরে এলাকায় কৃষক মাঠ দিবস পালন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এগ্রিপ্লাস লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কৃষিবিদ সরদার আলী মর্তুজা, হেড অপারেশন অফিসার কৃষিবিদ এটিএম নুরে আলম, করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খান দিদার, দেহুন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সঞ্জু, সমাজকর্মী এম এ হানিফসহ হাজারো কৃষক। কৃষিবিদ এটিএম নুরে আলম বলেন, বিদেশ থেকে শতভাগ ভালো পণ্য কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে যাতে কৃষকরা ভালো ফলন পেতে পারেন। কৃষিবিদ সরদার আলী মর্তুজা বলেন, কৃষককে চারা থেকে শুরু করে সব সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কৃষককে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে তিনি সারা দেশে তা ছড়িয়ে দিতে চান। দেহুন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সঞ্জু কৃষক মতিউর রহমানকে লাখ টাকার চাষি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করায় এগ্রিপ্লাস লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানান। করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন দিদার বলেন, কৃষিতে উন্নতি ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি এগ্রিপ্লাস লিমিটেডের ‘লাখ টাকার চাষি’ প্রকল্পটি পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।