অপচয় রোধে উন্নয়ন কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরের শুরুতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এবার বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের লক্ষ্য থেকে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা কমিয়ে আরএডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকার জন্য আবারো নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ঘন ঘন প্রকল্প সংশোধন না করাসহ প্রকল্পের গুণগতমান রক্ষায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আরএডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের বরাদ্দ ঠিক রেখে বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের অংশ কমানো হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের সেই ঘটনার পর আমাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিদেশিরা চলে যায়, ফলে সেসব উন্নয়ন প্রকল্প অনেকদিন বন্ধ ছিল। তবে এখন কাজে গতি এসেছে। এডিপি বাস্তবায়ন বেড়েছে। আগামীতে যদি কোনো মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত অর্থেরও প্রয়োজন হয় তাহলে সেটি আমি বিবেচনা করে বরাদ্দ দেব।
তিনি জানান, উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগতমান রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী আবারো নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। অপচয় রোধে কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, সভায় আরএডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৫৮টিতে। এর মধ্যে ৩শটি প্রকল্প চলতি অর্থবছর সমাপ্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। আরএডিপিতে বরাদ্দ বিহীনভাবে ১০২৭টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ২৬৮টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একাধিক প্রকল্প রয়েছে এমন মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের অর্থ প্রয়োজনে অন্য প্রকল্পে ব্যয় করতে পারবেন। সভায় তিনি জানান, এবার ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে ১৪শ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দ হতে পরিকল্পনামন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ প্রদান করবেন। তবে আগামী ১৫ই মের পরে এই খাত হতে আর বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জানান, সভায় আইএমইডি থেকে ১৮টি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। যথাযথভাবে যাচাই না করে পরিকল্পনা গ্রহণ, নিবিড় তদারকির অভাব, প্রকল্প এলাকাকে পরিবেশবান্ধব উপায়ে গড়ে তোলার মতো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এক ব্যক্তি যেন একাধিক প্রকল্পের পরিচালক না হয় সেই নির্দেশনা আবারো দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প এলাকায় জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য সাইনবোর্ড স্থাপন, রাস্তার গুণগতমান রক্ষাসহ সড়কের পাশে পরিকল্পিত ভাবে গাছ লাগানোসহ উন্নয়ন প্রকল্প নিবিড় পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থ বিভাগ হতে প্রাপ্ত সম্পদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ব্যতীত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপির আকার হ্রাস পেয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা (৩.২৩%)। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা হ্রাস পেয়েছে মাত্র ২৫ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হ্রাস পেয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা (৮.৬৮%)। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য চলতি অর্থবছর মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আরএডিপিতে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে (১৪.৩২%) ৯ হাজার ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দ বিভাজনের চিত্রে দেখা যায়, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা (২৫.২৮%) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুত্ খাতে ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা (১৫.০৬%), গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ৪র্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ মোট ১৫ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা , শিক্ষা ও ধর্ম খাতে মোট ১৪ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা (৯.৫৬%), বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১২ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা (৮.৪৯%), স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৯ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা (৬.৪৭%) এবং কৃষি খাতে ৫ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরএডিপিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৫টি উন্নয়ন সহায়তা খাতে (ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা, উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা, জেলা পরিষদ বাবদ উন্নয়ন সহায়তা, পৌরসভা উন্নয়ন সহায়তা এবং সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সহায়তা) ১ হাজার ৯শ কোটি টাকা, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিনটি উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৪৮০ কোটি টাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা বাবদ ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৯টি উন্নয়ন সহায়তা খাতে স্থানীয় মুদ্রায় সর্বমোট ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছর বিভিন্ন কারণে বাদপড়া ৭টি প্রকল্পে মেয়াদ বৃদ্ধিসহ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মূল এডিপিতে বিভিন্ন কারণে বাদপড়া আরও ৬টি প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।