দেশীয় কাঁচামালে তৈরি চামড়ার পণ্যে বৈচিত্র্য

সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় চামড়ার ওপর সুতোর কারুকার্য। জুতো আর জ্যাকেটের চিরন্তন ধারণাকে ছাপিয়ে এখন চামড়া ব্যবহার হচ্ছে নিত্যনতুন সব ফ্যাশনেবল পণ্যে। শুধু ঢঙে নয়, চলতি ফ্যাশনের কথা বিবেচনায় রেখে রঙেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। শতভাগ দেশীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এমন নিত্যনতুন চামড়ার তৈরি পণ্য। চামড়ার প্রক্রিয়াজাত এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানিও করছেন উদ্যোক্তারা। তেমনি এক উদ্যোগের নাম ‘এনেক্স লেদার’।

হ্যান্ডব্যাগ, সাইডব্যাগ, মানিব্যাগ আর বেল্টের পাশাপাশি এনেক্স লেদার এর কারখানায় তৈরি হচ্ছে চামড়ার মোবাইল-ট্যাব-ল্যাপটপ কভার। ঘর সাজানোর উপকরণও বাদ যাচ্ছে না এই তালিকা থেকে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী টিস্যু বক্স, গিফট বক্স, ফুলদানি, পাসপোর্ট হোল্ডার, ফটোফ্রেম এমনকি সোফার কুশন কভারও তৈরি হচ্ছে চামড়ার ব্যবহারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে নিজে নিজে কিছু একটা করার পরিকল্পনা থেকেই ২০১৬ সালে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন মোস্তফা দীপু। তার মনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন উঁকি দিতে থাকে। চিন্তা করলেন, ব্যবসা করতে হলে এমন কিছু করতে হবে, মানুষের কাছে যার চাহিদা আছে। এই চিন্তা থেকে শুরু করলেন চামড়ার পণ্য বানানোর কাজ। প্রথমে রাজধানীর হাজারীবাগে একটি ছোট কারখানায় পণ্য তৈরির কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি গড়ে তোলেন একটি শোরুম। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই তার পণ্য পছন্দ করলেন। ঘুরে ঘুরে ধারণা নিলেন আরও ভালোভাবে কী কী পণ্য তৈরি করা যায়। একপর্যায়ে তিনি ফেসবুকে একটি পেজ চালু করলেন। এখানে পণ্যের ছবি দিতে লাগলেন। সাড়াও পেতে লাগলেন ভালো।

মোস্তফা দীপু বলেন, আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়তে থাকল। চামড়ার পণ্য নিয়ে কাজ করার পেছনে আরও একটি যুক্তি দেখালেন তিনি। দেশি চামড়ার পণ্যকে ভালো ব্র্যান্ড বানাতে চান বলেই এই কাজের প্রতি আগ্রহ তার। গত বছর রাজধানীর এলিফ্যান্ড রোডে আরেকটি শোরুম চালু করেন। ফেসবুকের পাশাপাশি এখন তিনি একটি ওয়েবসাইট চালু করেছেন (www.annexbdonline.com)। যেখানে তার পণ্যের ছবি ও দাম দেওয়া আছে।

মোস্তফা দীপু বলেন, আমার পণ্যের মান দেখে অনেক বড় বড় করপোরেট হাউস পণ্যের অর্ডার দিচ্ছে।  ছাড়া ক্ষুদ্র পরিসরে দেশের বাইরেও আমার পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের যেকোনো প্রান্তে পণ্য সরবরাহ করছে তার প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় কেউ পণ্য কিনতে চাইলে বিনা মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেন আর ঢাকার বাইরে বলে ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। তার প্রতিষ্ঠানে এখন ১৭ জন কাজ করেন।

রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের  ওমেন্স ভলান্টিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন (ডাব্লিউভিএ) ভবনে অডিটোরিয়ামে চলা ৩ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা হাটেও পাওয়া যাচ্ছে এনেক্স লেদারের সব পণ্য। মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। হাটের আয়োজক বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)-এর উদ্যোগে পরিচালিত ফেসবুকভিত্তিক ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ গ্রুপ। এবারের হাটে মোট ৫০টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।