সখিপুরে মিষ্টি তৈরি করে সফল নিয়ন কাফি

সখিপুর উপজেলার হাতীবান্ধা গ্রামের মো. ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. নিয়ন কাফি ভালো মানসম্মত মিষ্টি তৈরি করে অর্জন করেছেন সফলতা। দোকানের নাম দিয়েছেন ‘ফাতেমা মিষ্টি ঘর’। এখন প্রতি মাসে উপার্জন করছেন ৩০-৩৫ হাজার টাকা। মো. নিয়ন কাফির সাথে আলাপকালে জানা যায়, পরিবারের অর্থনৈতিক অভাবের কারণে তিনি ছোটবেলায় লেখাপাড়া করতে পারেননি। টাকার অভাবে অনেক হোটেলে প্রায় ২৫ বছর কর্মচারীর কাজ করেছেন। বেশি টাকা উপার্জনের জন্য তিনি ২০০৯ সালে লিবিয়া যান, কিন্তু সেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় মাত্র ১৮ মাস পর ঋণগ্রস্ত অবস্থায় দেশে ফিরে এসে কোনো উপায় না থাকায় জীবিকার তাগিদে দর্জির কাজ শুরু করেন। একদিন বন্ধুদের অনুরোধে পেঁয়াজি ও মোগলাই তৈরি করলে তা খুব ভালো হয় এবং চাহিদার কারণে ব্যবসা পরিবর্তন করেন। পরবর্তীতে আবার কিছু লোকের অনুরোধে ভাতিজা শহিদুলের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নিয়ে মিষ্টি তৈরির সরঞ্জাম কিনে প্রথমে পাঁচ-ছয় কেজি মিষ্টি তৈরি করেন। যা বিক্রি করতে সময় লাগে প্রায় সাত-আটদিন।
শুরু হয় তার নতুন পথচলা। অন্য কোনো দিকে মনোনিবেশ না করে প্রতিদিন পেঁয়াজি-মোগলাইয়ের সাথে মিষ্টি তৈরি করে তা বিক্রি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তার তৈরি মিষ্টির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিক্রির পরিমাণও বাড়তে থাকে। এখন কমপক্ষে ৪০-৫০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন। রসমালাই বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ কেজি। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। থাকার ঘর তৈরি করেছেন পাঁচ লাখ টাকা করছ করে। যে কাজগুলো সে আগে একা সামলাতে পারত, ব্যবসা প্রসারিত হওয়ায় এখন তা সম্ভব নয় বলে কর্মচারী রেখেছে দুইজন।
কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এই ফাতেমা মিষ্টি ঘরে কাজ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। কারণ মো. নিয়ন কাফি তাদের খুবই ভালোবাসেন এবং সময়মতো বেতন পরিশোধ করেন। এ ছাড়াও কর্মচারীদের নামে আলাদা ডিপিএস করে দিয়েছেন, যেখানে প্রতি মাসে পাঁচশত টাকা জমা করেন নিয়ন কাফি। নিয়ন কাফির স্ত্রী বলেন ‘তিন সন্তানকে নিয়ে আমরা আগে খুবই কষ্টে দিন কাটাইতাম। আল্লাহ এখন আমাদের এই মিষ্টি তৈরির উসিলায় সংসারে সচ্ছলতা দান করেছেন এবং সন্তানদের লেখাপড়া করাইতে পারতাছি’। শহিদুল ইসলাম, ডি এম বুলবুল, রিপন আহমেদ, নূরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন ক্রেতা বলেন, ‘আমরা এই দোকানের নিয়মিত কাস্টমার, কারণ এখানকার মিষ্টি মানে খুব ভালো।’ নিয়ন কাফি বলেন ‘আমার জীবন থেকে আমি একটি জিনিস বুঝতে পেরেছি, সেটা হলোÑ চেষ্টা থাকলে এবং পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।’