চা চারা দিয়ে তৈরি হবে সাবান শ্যাম্পু আচার

চায়ের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চা চারার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এখন তৈরি হবে সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, আচার, চা কোলা এসব পণ্য। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তারা বিভিন্ন দেশের কারিগরিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতাও নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চীন থেকে সহযোগিতা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।দেশে বর্তমানে চা চারার শীর্ষের কুঁড়ি ও দুটি পাতা নেওয়া হয়। এগুলো থেকে উন্নত মানের চা উৎপাদিত হয়। এসব চা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশে এগুলো বাজারজাত করা হয় না। এর নিচের যেসব পাতা থেকে চা উৎপাদন করা হয় সেগুলো কিছুটা নিম্নমানের। এসব চা দেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে। চা চারার ওপরের দিকের বড়জোর ১০টি পাতা ছাড়া অন্য কোনো কিছু বাণিজ্যিকভবে কাজে লাগানো হয় না। সেগুলোকে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে চা চারা থেকে বহুমুখী উৎপাদন হচ্ছে না। কিন্তু চা উৎপাদনে ব্যবহৃত পাতার পর আরও অনেক পাতা, ডাল, চারার নিচের অংশ, শিকড় এগুলো থেকে যাচ্ছে। এগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এখন সেগুলো থেকে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পণ্য বলে এগুলোর বেশ চাহিদাও রয়েছে।

চা উৎপাদনের পর চা চারার বাকি অংশ দিয়ে বর্তমানে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে। এর মধ্যে চা চারার পরিণত পাতাগুলো দিয়ে তৈরি হচ্ছে আচার। বাংলাদেশ চা বোর্ড এরই মধ্যে চায়ের আচার তৈরি করে সেগুলো নিজেরা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন ধরনের মসলা, ভোজ্য তেল দিয়ে এই আচার তৈরি করা হচ্ছে।বিদেশে চায়ের নানা ধরনের প্রসাধনীসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে টি সোপ, টি শ্যাম্পু, টি টুথপেস্ট, টি লোশন এসব। ভেষজ পণ্য হিসেবে এগুলোর চাহিদাও বেশ। বিশেষ করে চায়ের পাতা, শিকড়, চারার বাকল দিয়ে এগুলো তৈরি হচ্ছে। চা চারা ও পাতার মধ্যে এক ধরনের ভেষজ ক্ষার আছে। যে কারণে চায়ের স্বাদ তেতো ধরনের হয়। এই ক্ষারে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান নেই। সাবানের প্রধান উপাদানই হচ্ছে ক্ষার। যে কারণে চা চারার উপাদান ব্যবহার করে তৈরি সাবান এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চা চারার মধ্যে এক ধরনের সুগন্ধও আছে। এটি সাবানসহ অন্য পণ্যগুলোকে সুগন্ধিতে সুরভিত করে তোলে। চা চারার শিকড় ও বাকলের অংশ থেকে তৈরি হচ্ছে টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, লোশন ইত্যাদি পণ্য।বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কোমল পানীয়ের মধ্যে চা শ্রেষ্ঠ। এখন চা চারার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে চা কোলা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের উপকরণ মিশিয়ে একে নোনতা, তেতো, মিষ্টি স্বাদ যোগ করা যাবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউিট কাজ শুরু করেছে।সূত্র জানায়, বাংলাদেশ চা বোর্ড ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে চা চারার বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে নানা ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তারা দেশে উন্নত মানের গ্রিন টি তৈরি করা শুরু করেছে। এই চা এখন বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। সরকারিভাবে শ্রীমঙ্গলে একটি গ্রিন টি ফ্যাক্টরিও স্থাপন করা হচ্ছে।