সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াবে সরকার। বর্তমানে বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে সারাদেশে ৬৭ লাখ মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরকার এ সংখ্যা বাড়িয়ে এক কোটিতে নেবে। এ বছরই হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের এ কর্মসূচির আওতায় নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গতকাল দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচক তুলে ধরার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নেতিবাচক মতামতের সমালোচনাও করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে যেসব তথ্য এসেছে, তা তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিতে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। যে কোনো অছিলা পেলেই তাদের সামাজিক নিরাপত্তার অধীনে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, তবে বৈষম্য রয়েছে। কিন্তু দাভোসের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম। যেখানে ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। গতবছর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১৪ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের বাইরে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার মানুষের। যারা বলছেন কর্মসংস্থান হচ্ছে না তাদের সঠিক তথ্য জেনে বক্তব্য দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়া যাবে না বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রশ্ন ফাঁসের কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যারা যুক্ত, আমেরিকা গেলেও তারা প্রশ্ন ফাঁস করে ফেলবে। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর করাকে এখন দেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমছে। আশির দশকে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ছিল ৮০ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান। শুধু বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির নিশ্চয়তা দিতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগের অভাব হবে না।
মুস্তফা কামাল বলেন, আর্থিক খাতের ব্যাপক বিস্তার হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক ভালো। যদিও আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামান্য কমেছে। তবে বর্তমানে উন্নয়ন কাজের জন্য আমদানি হচ্ছে। এটি দেশের জন্য ভালো। আগামী পাঁচ-ছয় বছর এ ধরনের আমদানি অব্যাহত থাকবে। এরপর সেবা খাত বিকশিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্যাংকিং খাতের ঋণ অনিয়ম বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্পকারখানা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ করে না। কারখানার চলতি মূলধন দেয় ব্যাংক। চীনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্পকারখানা করার নজির কম। অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজার আদর্শ বিকল্প হতে পারে। ব্যাংকিং খাতে বর্তমানের বিপর্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যে অনিয়মগুলো হচ্ছে, সেগুলো বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়া উচিত। এখানে অনিয়মের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতাও রয়েছে। শেয়ারবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে বাজার অনেক ভালো যাচ্ছে।