দেশের ফোরজি স্পেকট্রাম নিলামের লক্ষ্যমাত্রা ৫’শ মিলিয়ন ডলারের বেশি

সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সম্প্রতি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দুইটি মোবাইল অপারেটর ৫০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে  চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক (ফোরজি) সেবার অনুমতি পেতে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার স্পেকক্ট্রাম নিলাম সংক্রান্ত একটি প্রেস কনভারেন্সও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, নরওয়ের টেলিকম কোম্পানি টিলিন ৫৫.৮ শতাংশ ও স্থানীয় টেলিকম কোম্পানি ৩৪.২ শতাংশ অশিদারীত্বে ১৮০০ ব্যান্ড এর ৫ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম নিলাম নিয়েছে ১৫৫ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে।

 

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক নেদারল্যান্ডের ভিওয়ান লি. এর একটি  শাখা প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানিটি ২১০০ ও ১৮০০ দুইটি আলাদা ব্যান্ডের ১০.৬ মেগাহার্জ স্পেকক্ট্রাম নিলাম নিয়েছে ৩০৮.৬ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে।

 

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)  রাজধানী ঢাকাতে এই স্পেকক্ট্রাম নিলামের আয়োজন করে গত মঙ্গলবার। এই নিলাম অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে টেলিকমিউনিকেশন ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠিত নিলামের নির্দেশনায়, ১৮০০ মেগাহার্জের ব্যান্ডের জন্য প্রতি মেগাহার্জ স্পেকট্রাম ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২১০০ ব্যান্ডের জন্য প্রতি মেগাহার্জ স্পেকট্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডালারে।

 

নির্দেশনানুযায়ী লাইসেন্সের জন্য পুনরায় কোন নিলামের আয়োজন করা হবে না। বাকি ৪টি অপারেটর নির্ধারিত ফি পরিশোধের মাধ্যমে লাইসেন্স গ্রহণ করতে পারবে। চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ফোরজির জন্য লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন টাকা ( ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

 

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধিন কোম্পানি টেলিটক ফোরজি স্পেকট্রাম নিলামে অংশগ্রহণ করেনি। তারা মনে করছে যে, তাদের বর্তমান অবস্থাতেই ফোরজি সেবা দিতে পারবে।

 

নিলাম অনুষ্ঠানের পর বিটিআরসির’র চেয়ারম্যান ড. শাহজানান মাহমুদ সংবাদিকদেরকে বলেন,‘সরকার ফোরজি নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেভিনিউ আয় করবে ৫২.৮৯ বিলিয়ন টাকা (৬৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার )। লাইসেন্স ফি প্রাদানকারীদের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, এনটিটি ডোকোমো কোম্পানিরা।’

 

তিনি আরো বলেন,‘বিটিআরসি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটককে ফোরজি লাইসেন্স হস্তান্তর করা হবে।’ তিনি আশা করেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরজি সেবা চালু হবে।

 

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফোরজি সার্ভিস চালু হলে দেশে ডিজিটাল ডিভাইস এর ফিচার সহযোগী কমবে না। দেশে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাই।

 

গ্রামীণফোন, চীনের বিখ্যাত ব্র্যান্ড হুয়াওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ফোরজি নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করছে। অন্য অপারেটররাও জানিয়েছে যে, তারা ইতোমধ্যে ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবা দিতে সব রকম প্রস্তুত। বাংলাদেশে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৫.১১৪ মিলিয়ন। গত এক বছরে দেশে মোবাইল ব্যবহারকারী হয়েছে ১৮.৭২ মিলিয়ন।

 

সম্প্রতি বিটিআরসি কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা যথাক্রমে ৬৫.৩২৭ মিলিয়ন, ৪২.৯০৮ মিলিয়ন, ৩২.৩৮৪ মিলিয়ন ও ৪.৪৯৪ মিলিয়ন।

 

২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় প্রজন্মের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি দেশের রাষ্ট্রয়ত্ব কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবার কথাও বলেন।