ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প যাতায়াতে স্বস্তি আনবে

রাজধানীর যানজট নিরসন এবং স্বস্ত্মিদায়ক যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্প বাস্ত্মবায়নের কাজ দ্রম্নতবেগে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্ত্মবায়িত হলে উত্তরা থেকে স্বল্প সময়ে মতিঝিলে পৌঁছা যাবে। উত্তরা থেকে শুরম্ন হয়ে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর রম্নট হবে মতিঝিল পর্যন্ত্ম। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে স্টেশন থাকবে ১৬টি। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। প্রকল্পটি বাস্ত্মবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পটির নয়টি টেস্ট পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। শুরম্ন করা হয়েছে মূল পাইলের কাজ। একই সঙ্গে কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট এলাকায় সার্ভিস লাইন সরানোর কাজও চলমান। একই প্রকল্পের মিরপুর-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও অংশে ডিভাইডার দিয়ে মূল লাইন স্থাপনের জন্য জায়গা সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাস্ত্মার আইল্যান্ড বরাবর এবং এর দুই পাশ থেকে জায়গা সংরক্ষণ করে মূল পাইলের কাজ শুরম্ন হয়েছে এ অংশে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্ত্মবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্ত্মর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। আর সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। প্রায় ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্পে থাকবে ১৬টি স্টেশন। ইতোমধ্যে এগুলোর নকশা চূড়ান্ত্ম করা হয়েছে। উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত্ম ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত্ম এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাস্ত্মবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রস্ত্মাবিত নকশা অনুযায়ী প্রায় ১৮০ মিটার লম্বা হবে প্রতিটি স্টেশন। এসব স্টেশন নির্মাণ করা হবে প্রায় দোতলা সমান উচ্চতায়। নিচতলায় হবে টিকিট ক্রয় ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশ পথ। স্টেশনের দুই পাশ থেকে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারবে। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে যথাক্রমে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পলস্নবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। সূত্র জানায়, মেট্রোরেলে মোট ২৮ জোড়া ট্রেন থাকবে। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কোচ বা বগি। এগুলো চলাচল করবে রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে মিরপুর হয়ে ফার্মগেট, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর হয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত্ম। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত্ম মেট্রোরেলে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। আর প্রতি চার মিনিট পরপর ১৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করবে এ পরিবহনে।
মেট্রোরেলের যাত্রী পারাপারের জন্য রেলকোচ তৈরির কাজ ইতোমধ্যে জাপানে শুরম্ন হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর পুরো কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত্ম ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পরে এই উড়ালপথের ওপরই ট্রেনের জন্য লাইন বসানো হবে। এ প্যাকেজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত্ম। মেট্রোরেল চালু হলে প্রতিদিন কয়েক লাখ যাত্রী স্বস্ত্মিদায়ক অবস্থায় চলাচল করতে পারবে। এর ফলে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। মেট্রোরেলে বিভিন্ন রম্নটে সাশ্রয়ী খরচে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হলে প্রাইভেট কার এবং অন্যান্য যানবাহনে করে চলাচল করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করাকে প্রকল্প সংশিস্নষ্টরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ায় আশা করা হচ্ছে তা একটি ভালো নজির বলে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্প বাস্ত্মবায়নের মাধ্যমে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।