রপ্তানি বাড়াতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা

নারিকেল ছোবড়া কিংবা তা থেকে তৈরি গুঁড়া আগে নানা কাজে ব্যবহার হলেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে বাহারি পণ্য। দিন দিন বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠছে এসব পণ্যসামগ্রি। বিশেষ করে খুলনার বাগেরহাট অঞ্চলে তৈরি এসব পণ্য এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির প্রক্রিয়াকে আরও উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনাও ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যে। সর্বশেষ গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাবে উদ্যোক্তারা। বর্তমনে খর, আখের ছোবড়া ও হোগলাসহ বেশ কয়েকটি উপকরণের পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। গত বছর এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা থাকলেও চলতি অর্থ বছরে তা ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে গতকাল সব ব্যাংকে পাঠানো ওই ঘোষণায় বলা হয়, আগে জারিকৃত হোগলা, খড়, আখের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে হাতে তৈরি পণ্যের পাশাপাশি নগদ সহায়তা প্রাপ্তির সংশ্লিষ্ট তালিকায় নারিকেল ছোবড়ার আঁশ দ্বারা (হস্তজাত কিং বা যান্ত্রিক উপায়ে) উৎপাদিত পণ্য অন্তর্ভুক্ত হবে। জুলাই, ২০১৭ থেকে জুন, ২০১৮ সময়ে জাহাজিকৃত নারিকেল ছোবড়ার আঁশ দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে নগদ সহায়তার এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে। তবে আলোচ্য সুবিধা প্রাপ্য তার ক্ষেত্রে সে সব আবেদনপত্র দাখিলের সময়সীমা ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে সে সব ক্ষেত্রে সার্কুলার জারির ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন দাখিল করা যাবে। পরবর্তী সময়ে হোগলা, খড়, আখের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে হাতে তৈরি পণ্য রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা প্রদান বজায় থাকা শর্তে নারিকেল ছোবড়ার আঁশ দ্বারা উৎপন্ন পণ্যের বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রদেয় হবে।

জানা যায়, নারকেল ছোবড়ার আঁশ দিয়ে যন্ত্রে তৈরি হচ্ছে তোশকের (ম্যাট্রেস) ভেতরের অংশ, যা কয়ার ফেল্ট নামে পরিচিত। এছাড়া বসার গদি ও ঘরের আসবাবসহ নানা তৈজসপত্রও তৈরি হচ্ছে। এখন নারকেলের ছোবড়ার পাশাপাশি ছোবড়ার গুঁড়াও মূল্যবান হয়ে উঠেছে। এ গুঁড়াকে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। শুরুতেই এগুলোর বাজার পাওয়া গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।

মানভেদে প্রতি ঘনফুট কয়ার ফেল্টের দাম ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। নারকেলের ছোবড়া থেকে আঁশ ছাড়াতে গেলে প্রচুর পরিমাণে গুঁড়া বের হয়। সেই গুঁড়া রোদে শুকিয়ে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চাপ দিয়ে ব্লকের মতো প্রস্তুত করা হয়। সেই ব্লক ‘কয়ার পিট’ নামে পরিচিত। দেশের বাজারে কয়ার ফেল্টের চাহিদা মেটানোর পর এখন নতুন পণ্য কয়ার পিট প্লাস্টিকে মুড়ে রপ্তানি করা হয়। বিভিন্ন দেশে গবাদি পশুপালন ফার্মে ও কৃষি কাজে মাটির বিকল্প হিসেবে কয়ার পিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ভারতের জাতীয় কয়ার বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে নারকেলের আঁশের উৎপাদন বছরে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন। এর ৯০ ভাগই জোগান দেয় ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ভারত বছরে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১৪ কোটি ডলারের। আর শ্রীলঙ্কার বার্ষিক রপ্তানি আয় ৬-৭ কোটি ডলার। আমাদের রপ্তানি আয় এইখাত থেকে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আর্জনে এইখাত বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম হায়দার এ বিষয়ে বলেন, আমাদের দেশে বহু মেধাবী যুবক রয়েছে। যারা নতুন নতুন বিষয় নিয়ে পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম। নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে যে পণ্য তৈরি হচ্ছে তা আমাদের কাছে একেবারেই নতুন। সম্ভাবনার এই খাতকে আমাদের দেখভাল করা প্রয়োজন। সরকার নতুন এই পণ্যের জন্য নানা সুবিধা দিতে পারে, তাতে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে। আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা এই খাতে এগিয়ে আসবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। কর্মসংস্থান বাড়বে ফলে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে।