জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি

জামদানি ও ইলিশের পর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম। এ আমকে জিআই স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এরই মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে বিজি প্রেসে। এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে কেউ দ্বিমত পোষণ না করলে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে ক্ষীরশাপাতি আম। পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ক্ষীরশাপাতি আমকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য গত বছরের শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র যৌথভাবে আবেদন করে। ওই আবেদনের পর বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গেজেট প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠিয়েছে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। আইন অনুযায়ী, এ বিষয়ে দেশ বা বিদেশের কারো আপত্তি থাকলে তা গেজেট প্রকাশ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে জানাতে হয়। তবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কোনো আপত্তি না জানালে এ অঞ্চলের আমটি এখন শুধু বাংলাদেশেরই হবে। দুই মাস পর আবেদনকারীকে সনদ প্রদানের জন্য আরো একবার আবেদন করতে হবে। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই সনদ তুলে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ক্ষীরশাপাতি আম ছাড়াও বেশ কয়েকটি জাত দেশের সম্পদ। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আমরা জিআই পণ্য হিসেবে তথ্যের নিরাপত্তা ও সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পাদন করেছি। দীর্ঘ সময়ের আইনি প্রক্রিয়া ও যাচাই-বাছাইয়ের পর জাতটি বাংলাদেশের হতে যাচ্ছে। এখন এটি চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার আগের ধাপে আছে।

স্বাদ ও জনপ্রিয়তার জন্য আমকে বাংলাদেশে ফলের রাজা বলা হয়। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বলা হয় আমের রাজধানী।

এ জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় অংশই পরিচালিত হয় আমকে কেন্দ্র করে। জেলার ৮০-৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আম চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এখানকার উৎপাদিত সুস্বাদু ক্ষীরশাপাতি আমের বিদেশেও চাহিদা রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে রফতানি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। প্রতি বছর বাড়ছে রফতানির পরিমাণ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বারির আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আমকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদন করা হয়। জাতগুলো হলো— ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া ও আশ্বিনা। এক বছর আগেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল।

ক্ষীরশাপাতি জাতের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম উত্কৃষ্ট জাতগুলোর মধ্যে একটি। এটি খুবই জনপ্রিয় একটি বাণিজ্যিক জাত। আমটি মাঝারি আকারের এবং অনেকটা ডিম্বাকৃতির। ফল গড়ে ৮ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার লম্বা, পাশে ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার, উচ্চতায় ৬ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২৬৩ দশমিক ৯ গ্রাম। পাকা ফলের ত্বকের রঙ সামান্য হলদে এবং শাঁসের রঙ হলুদাভ। শাঁস আঁশবিহীন ও রসাল। গন্ধও আকর্ষণীয় ও স্বাদে বেশ মিষ্টি। আমটির গড় মিষ্টতা ২৩ শতাংশ।

ক্ষীরশাপাতি আমের ৬৭ দশমিক ২ শতাংশই আহারোপযোগী। জ্যৈষ্ঠ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এ আম পাকা শুরু হয়। ফল পাড়ার পর পাকতে  ৫-৭ দিন সময় লাগে। ফল পরিপক্ব হতে (ফুল আসা থেকে) প্রায় চার মাস সময় লাগে।