বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে রূপসায়

সরকার খুলনার রূপসায় আরও একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে ৮০০ মেগাওয়াটের। এলএনজি বা ডিজেলে চালানো হবে। বর্তমানে প্রকল্পটির অর্থায়ন, জমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক নানা বিষয়ে কাজ চলছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) অনুমোদনের পর এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

খুলনার খালিশপুরে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউজপ্রিন্ট কারখানার জমিতে এ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারখানার ৫০ একর জমিতে কেন্দ্রটি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজেসিএল)। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ প্রকল্পটির মূল্যায়ন সভা করে কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে এনডব্লিউপিজেসিএল ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে।

এ প্রকল্পে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার হবে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে থাকছে ডিজেল (এইচএসডি)। প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা এনডব্লিউপিজেসিএল বলছে, পেট্রোবাংলা এ প্রকল্পে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্নিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা প্রকল্পটির বিস্তারিত বিশ্নেষণ করে বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। রূপসা পাওয়ার প্লান্ট তার অন্যতম উদাহরণ।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলা যে গ্যাস সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যে নিশ্চয়তা বিষয়ক চুক্তি হয়েছে। পেট্রোবাংলা পটুয়াখালী ও মংলায় রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছে। সেক্ষেত্রে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কোন উৎস থেকে প্রাথমিক জ্বালানি পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। এ বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খুরশিদুল আলম সমকালকে বলেন, প্রকল্পটির অনেক কাজ এগিয়েছে। ইতিমধ্যে নিউজপ্রিন্ট কারখানার জমির বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানির বিষয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। অর্থায়নের বিষয়ে এডিবি ও আইডিবির সঙ্গে আলোচনাও অনেক এগিয়েছে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্নিস্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির বড় সমস্যা প্রাথমিক জ্বালানি। কারণ প্রকল্পটি হবে এলএনজিভিত্তিক। কিন্তু এলএনজির সরবরাহ উৎস কী হবে তা স্পষ্ট নয়। প্রথমে বলা হয়েছিল ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। এখন বলা হচ্ছে পেট্রোবাংলা মহেশখালী থেকে এলএনজি সরবরাহ করবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই। পিইসি মূলত জ্বালানির উৎস সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, এই কেন্দ্রে গ্যাস বা ডিজেল সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। রূপসা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন রয়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি দেশে এলএনজি গ্যাস ব্যবহার শুরু হবে। অর্থাৎ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশে গ্যাস আমদানি শুরু হবে। প্রথমে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে বাড়তি যোগ হবে। এরপর প্রতি বছর গ্যাস আমদানি বাড়ানো হবে। ফলে আগামী বছর থেকে গ্যাসের সংকট আর সেভাবে থাকবে না। বিশেষ করে বিদ্যুৎসহ শিল্পকারখানায় গ্যাসের সমস্যা থাকার কথা নয় বলে মনে করে জ্বালানি বিভাগ। রূপসায় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগবে। ফলে তখন এই কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা কোনো সমস্যা হবে না।

বাস্তবায়নকারী সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডি, এনভায়রনমেন্টাল স্টাডি ও সোশ্যাল সেফগার্ড স্টাডি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ঠিকাদার ও প্রকৌশল ফার্ম নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন। অর্থায়নকারী এডিবি গত অক্টোবরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন শেষ করেছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে আট হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে দুই হাজার ৫২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর এনডব্লিউপিজেসিএল নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে ৫০ কোটি টাকা। বাকি ছয় হাজার ২৩৮ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এ ঋণ দেবে। এ দুই সংস্থা প্রকল্পটিতে এক হাজার ২১৫ কোটি টাকা অনুদান দেবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। এই লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা।