নীড় তথ্য প্রযুক্তি স্ক্রাইবিং খাতের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে অগমেডিক্স

স্ক্রাইবিং খাতের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে অগমেডিক্স

বাংলাদেশি স্টার্টআপ অগমেডিক্স এর নাম আমরা এর আগেও অনেক শুনেছি। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছে। স্কাইপ বলতে এস্তোনিয়া বা নোকিয়া বলতে ফিনল্যান্ডের নাম যেমন বিশ্বজুড়ে সমাধিত ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ সুনাম বৃদ্ধির জন্য ভূমিকা রাখবে স্টার্টআপ কোমপানি অগমেডিক্স। এ জন্য অগমেডিক্সের মতো সব ধরনের স্টার্টআপকে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করছি। মঙ্গলবার গুলশানে চিকিত্সাক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্রযুক্তি সমাধান উদ্যোগ অগমেডিক্সের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি আরো বলেন, অগমেডিক্সে শেয়ার নেবে সরকার। ইকুইটি হিসেবে বিনিয়োগ করবে। তবে তা ৫০ শতাংশের বেশি হবে না। কারণ, সরকার ব্যবসা করতে চায় না। স্টার্টআপগুলোকে সরকার সাহায্য করতে চায়। বিদেশে ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেও  চায় বর্তমান সরকার।

 

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, ‘স্কাইপ বলতে এস্তোনিয়া বা নোকিয়া বলতে ফিনল্যান্ডের নাম যেমন বিশ্বজুড়ে পরিচিত, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ভূমিকা রাখবে স্টার্টআপ কোম্পানি অগমেডিক্স। এ জন্য অগমেডিক্সের মতো সব ধরনের স্টার্টআপকে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করছি।’

 

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শহর সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক বিনিয়োগকারী সংগঠন রেডমাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরার্ড ভ্যান হ্যামেল প্লেইটরিংক, অগমেডিক্স প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়ান শাকিলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইতিমধ্যে রেডমাইলনামক আমেরিকান প্রতিষ্ঠানটি দশ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে দূর-সেবাভিত্তিক এই স্ক্রাইবিং উদ্যোগে। অগমেডিক্স যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টিরও বেশি স্টেটে প্রাইমারি কেয়ার ডক্টর, স্পেশালিস্ট ও সার্জনদের সেবা দিয়ে আসছে; যারা প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার রোগী দেখেন। বাংলাদেশে এ কার্যক্রম পরিদর্শনে ঢাকায় অগমেডিক্স প্রধান কার্যালয়ে আসেন জেরার্ড ভ্যান হ্যামেল প্লেইটরিংক। অগমেডিক্স প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ান শাকিল বলেন, ‘অধিকতর উন্নতসেবা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যা সেবা গ্রহণকারীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা এনে দিবে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার অগমেডিক্স প্রধান কার্যালয়কে সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আগামী দিনে এখানে আরও কয়েকশ প্রকৌশলী এবং কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে।’

 

 

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি বছর অগমেডিক্সে নতুন কর্মস্থানের মাধ্যমে সরকারের ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে পাশে থাকতে চাই। এ জন্য আইসিটি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্পের যে সহযোগিতা করছে তার প্রতি আমাদের অনেক কৃতজ্ঞতা।’

 

রেডমাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরার্ড ভ্যান হ্যামেল প্লেইটরিংক বলেন, ‘বাংলাদেশে অগমেডিক্স-এর কার্যক্রম সত্যি অসাধারণ। এখানকার কর্মীরা প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।’

 

আন্তর্জাাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কয়েকটি স্টার্টআপ বা উদ্যোগ ভালো করছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজরে পড়েছে। গুগল গ্লাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এমনই একটি বাংলাদেশি স্টার্টআপ অগমেডিক্স। সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানে ইকুইটি বা শেয়ার হিসেবে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ সরকার। অগমেডিক্সের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ান শাকিল এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইয়ান শাকিল আরো বলেন, ‘অন্য দেশগুলোর মতো এদেশের তরুণদেরও রয়েছে প্রচুর লুকানো স্কিলড।’

 

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান রেডমাইল অগমেডিক্সে ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এ উপলক্ষে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সফরে আসেন রেডমাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরার্ড ভ্যান হ্যামেল প্লেইটরিংক। প্লেইটরিংক জানিয়েছে, বাংলাদেশে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখানকার তরুণদের মধ্যে অনেক উদ্যম রয়েছে। তবে অগমেডিক্সে বিনিয়োগ করার আগে তারা বড় সমস্যা নিয়ে কাজ করছে, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

 

সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক বিনিয়োগকারী সংগঠন রেডমাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরার্ড ভ্যান হ্যামেল প্লেইটরিংক বলেন, ‘বাংলাদেশে অগমেডিক্সের কার্যক্রম সত্যি অসাধারণ। এখানকার কর্মীরা প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইয়ান শাকিল ২০১২ সালে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন, যেটি বর্তমানে গুগল গ্লাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। তাদের সমস্যা সমাধান করার প্রকৃতি ও ধরন দেখে আমরা বিনিয়োগ করেছি।’

 

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্য স্টার্টআপগুলো বিনিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন জেরার্ড। তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ যে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ করছে, তা কত মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে বা তাদের সম্ভাবনার জায়গাগুলো বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশের অনেক স্টার্টআপ উঠে আসছে।’ নিজেদের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো এগিয়ে নিতে পারলে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেই বলে জানান তিনি।

 

অগমেডিক্স প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ান শাকিল জানান, রেডমাইল ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে তাদের স্ক্রাইবিং উদ্যোগে। স্ক্রাইবরা মূলত দূর থেকে চিকিত্সকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কাজটি করবেন। চিকিত্সক যখন গুগল গ্লাস চোখে রোগী দেখেন, তাঁর সামনে রোগীর তথ্য সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব থাকবে স্ক্রাইবের। অর্থাত্ যুক্তরাষ্ট্রের চিকিত্সাসেবার তথ্য বাংলাদেশের এই স্ক্রাইবরা করবেন। অগমেডিক্স বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যে প্রাইমারি কেয়ার ডক্টর, স্পেশালিস্ট ও সার্জনদের সেবা দিয়ে আসছে। যারা প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী দেখেন।

 

অগমেডিক্স প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ান শাকিল বলেন, ‘অধিকতর উন্নত সেবা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা সেবা গ্রহণকারীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেবে।

 

দুই বছর আগে বাংলাদেশ সরকার অগমেডিক্স প্রধান কার্যালয়কে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে এখানে এক’শ জনের মতো প্রকৌশলী কাজ করছেন। শিগগিরই ঢাকার বাইরে আরও কার্যক্রম বাড়ানোর কথা বলেন শাকিল।

 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্ক্রাইবিং খাত সম্পর্কে বলেন, ‘যখন একটি নতুন খাতের জন্ম হয় তখন সেখাতের জন্য প্রয়োজন হয় সেই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষ লোকবলের। স্ক্রাইবিংও তেমনই একটি খাত। এখানেও প্রয়োজন কিছু দক্ষ লোকবলের। অগমেডিক্স সেই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহীদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করছে। অগমেডিক্সকে স্টার্টআপ না বলে এটাকে ডিজিটাল ইকোনোমিক্যাল প্লাটফর্ম বলা যেতে পারে।’

 

তিনি আরো বলেন,‘সরকার স্ক্রাইবিং খাতের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। ইতোমধ্যে এই খাতের জন্য ২০০ জনকে ট্রেনিং দিয়েছে। এর মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ১০০ জন্য অগমেডিক্স-এ কর্মরত রয়েছে। যারা এখানে সুযোগ পায়নি তারাও কিন্তু দক্ষ লোকবলে পরিনত হয়েছে। তারা এমন অন্য কোম্পানিতে যোগদান করতে পারবে।  পোষাক শিল্পের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এই খাতটি শুরু হয়েছে ৩০ বছর আগে। শুরুর দিকে যারা এই খাতে কাজে যোগ দিয়েছে তারা তেমন দক্ষ ছিল না। পরবর্তীতে তারা আস্তে আস্তে দক্ষ হয়েছে এবং এই একটি মাত্র খাতই সারা দেশের অর্থনৈতিক চিত্রকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।’

 

তিনি আরো জানান, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এর ওয়েব সাইটে সফল ২৭টি ইকোনোমিক প্লাটফর্মের নাম রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি ‘অগমেডিক্স’, ‘জিয়ন’ ও ‘আপনজন’ স্টার্টআপের নাম রয়েছে। আগামীতে সরকার ও অগমেডিক্স চুক্তিভিত্তিক ট্রেনিং প্রকল্প পরিচালনা করবে। আপাতত ৬ হাজার তরুণ/তরুণীকে ট্রেনিংয়ের আওতায় আনা হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন স্ক্রাইবার বছরে অন্তত ৮ হাজার ডলার আয় করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকার ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ তা বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার সময় এসেছে। এই ভিশন ২০০৯ সালেই সরকার ঘোষণা করেছিল বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।