দেশের প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে ১০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে একটি করে মোট তিন হাজার অত্যাধুনিক একাডেমিক ভবন। আর মাত্র ১০ মাস পরে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সাতটি ক্যাটাগরিতে এসব ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর’ (ইইডি) চলতি মাসেই এসব ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করতে চলেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সংশ্নিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যের চাহিদা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে প্রতিটি আসনে ১০টি করে মোট তিন হাজার বিদ্যালয় এ প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হবে। এটিকে বর্তমান এমপিদের জন্য ‘নির্বাচনী বরাদ্দ’ হিসেবেই দেখছেন সংশ্নিষ্টরা। নির্বাচনের বছরে এর আগেও এ রকম বরাদ্দের নজির আছে।
প্রকল্পটির আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে হাওর, বিল ও নদীভাঙনকবলিত এবং পাহাড়ি এলাকায় স্কুল ভবন নির্মাণ করা হবে বিশেষ ব্যবস্থায়। এসব স্কুল ভবন ‘আশ্রয়কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। চারতলা, পাঁচতলা ও ছয়তলাবিশিষ্ট এসব একাডেমিক ভবনের প্রতিটিতেই পৃথক প্রকল্পের (আইসিটি) মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা সমকালকে বলেন, ‘স্কুল ভবনের ধারণা এখন অনেক বদলে গেছে। সারাবিশ্বেই বিদ্যালয়ের ভবনগুলো বহুমুখী কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এ দেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যায় হাওর-নদী ভাঙনের কবলে পড়ে, ভারি বর্ষণে ক্ষতি হয় পাহাড়ি এলাকার। ঘূর্ণিঝড়েও ক্ষতি হয় গ্রামাঞ্চলের। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোর একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে, যাতে সেগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা যায়।’
আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ নান্দনিক ডিজাইনে তিন হাজার স্কুল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ইইডি প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার আলোকে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। তিনি তা অনুমোদনও করেছেন।’
প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে, সাতটি ক্যাটাগরির প্রথমটিতে রয়েছে সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকার দুই হাজার ১৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এগুলোতে একটি করে চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ক্যাটাগরি-২-এ রয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার ১০০টি ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট ছয়তলা ভবন। ক্যাটাগরি-৩-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পাহাড়ি এলাকাকে। এসব স্থানে ৫০টি চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা স্কুল ভবন নির্মাণ করা হবে।
ক্যাটাগরি-৪-এর অন্তর্ভুক্ত উপকূলীয় এলাকায় ১৫০টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব স্কুলের প্রতিটি ভবনেরই নিচতলা ফাঁকা রাখা হবে। এগুলো হবে পাঁচতলা ভিতবিশিষ্ট পাঁচতলা ভবন। এসব ভবন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র-কাম-শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহূত হবে।
ক্যাটাগরি-৫-এর আওতায় রয়েছে হাওর, বিল, নদীবিধৌত এলাকার ৫০টি স্কুল ভবন। এগুলোতেও নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা ভিতবিশিষ্ট পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। বন্যা হলে এগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
ক্যাটাগরি-৬-এর আওতাভুক্ত লবণাক্ত এলাকায় নির্মাণ করা হবে ১৭৫টি একাডেমিক ভবন। চারতলা ভিতবিশিষ্ট এই চারতলা ভবনগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধা রাখা হচ্ছে।
আর ক্যাটাগরি-৭-এর আওতাধীন নদীভাঙনকবলিত এলাকার ২৫টি স্কুলে নির্মাণ করা হবে স্থানান্তরযোগ্য (রিম্যুভাল স্ট্রাকচার) সেমিপাকা স্ট্রাকচার।
গত ১৬ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সারাদেশের তিন হাজার স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ নামে এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন নাগাদ।
ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা সমকালকে জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাব সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ভবনের বারান্দা, ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট, পানি সরবরাহ, ছাত্রীদের জন্য পৃথক কমনরুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট ও র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। আর ভবনের ঢালু ছাদ ও ছাদে টালির ব্যবস্থা রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বর্ধিত চাহিদা পূরণ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে জানিয়ে দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে, ঝরে পড়ার হার কমবে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে এবং দেশের তৃণমূল পর্যায়েও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৩২৭টি সরকারি ও ১৯ হাজার ৩৫৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।