আমন চাষে দারুন কষ্ট, খরচও বেশী। আবার বেশী কৃষি জমিও নেই। অল্প জমিতে অধিক ফসল অধিক আয় করতে হবে। সংসারের প্রয়োজনে বেশ কিছু ঋণ-দেনাও রয়েছে সেগুলি পরিশোধ করতে হবে, ছেলের পড়া-লেখা খরচ, এসব দিয়ে তারপর সংসারের খরচের বিষয়ে ভাবতে হবে। এতসব দুশ্চিন্তায় থেমে থাকেন নি খুলনার দাকোপ উপজেলাধীন কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের হরিণটানা নিবাসী কল্লোল গোস্বামী। দুশ্চিন্তার মধ্যদিয়ে এ তরুন কৃষক ভাবতে লাগলেন কি করা যায়, কিভাবে স্বল্প জমিতে ফসল লাগিয়ে বেশী লাভ করা যায়। এমন সময় উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি প্রশিক্ষণ পেয়ে তাঁর ভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়।
তিনি সবজি চাষের জন্য ধানের জমি থেকে দশ কাঠা জমিতে ছোট একটি পুকুর কেটে পোতা উঁচু করে নিলেন। পুকুরটা এমন ভাবে গভীর করলেন যেন গরমের সময় পানি থাকে। এরপর উঁচু পোতাটিকে ভাল করে ঘিরে দিলেন যেন গবাদি পশু প্রবেশ করতে না পারে। এরপর শুরু করলেন পরিকল্পিতভাবে এবং নিবীড় পরিচর্যার মাধ্যমে সবজি চাষ। জৈষ্ঠ মাসে ভিটে উঁচু করার পর আষাড় মাসে ছোট ছোট মান্দা করে সেখানে জৈবসার দিয়ে করলেন শশার চাষ। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী গাছে প্রয়োজনীয় সেচ, সার ও কীটনাশক দিতে থাকেন কল্লোল। একমাস বয়স থেকেই শশা ধরতে শুরু করে। শশার আশাতীত ফলন দেখে স্বপ্ন পূরনের আভাস পান কল্লোল। ভাদ্র মাস পর্যন্ত শশা বিক্রি করে কল্লোল সব খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেন।
শশার বাম্পার ফলনের পর আশ্বীন মাসে ক্ষেত ভালোভাবে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে সেখানে প্রথমে বেগুনের চারা রোপন করেন। চারা রোপনের পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটাতে থাকেন। চারাগুলি দেখতে দেখতে আশ্বীন মাসের মধ্যে ডালপালা বিস্তার করে বেশ বড় হয়েগেল। আশ্বীনের শেষ সপ্তাহের দিকে তাতে ফুল ধরা শুরু হল। তারপর ফুল থেকে বড় বড় বেগুন। অগ্রহায়ন মাস থেকে চলছে বেগুন বিক্রয়। কল্লোল বলেন এখন প্রতি সপ্তাহে ২ মন করে বেগুন বিক্রয় করা হচ্ছে। বেগুনের বাজার দরও বেশ ভালো। তার উপর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বেশী প্রয়োগ না করার কারণে এলাকাতে তাঁর ক্ষেতের বেগুনের চাহিদা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করা হয়েছে। বেগুন উঠবে চৈত্রমাস পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখাযায়, কল্লোলের ক্ষেতে বেগুন গাছের চারিধারে লাউ,কুমড়া, টমেটো, পুইশাক এবং ওলকপি হয়েছে প্রচুর পরিমানে। কল্লোল জানান বেগুন এবং শশা বাদে অন্যান্য সবজি বিক্রয় হয়েছে ১০ হাজার টাকার। সবুজ এ বাগানকে ঘিরে এখন কল্লোলের উপরে ওঠার স্বপ্ন। গ্রামের প্রধান সড়কের পাশে সবুজ এবং সাজানো গুছানো বাগানটি দেখতে শুধু ক্রেতারা নয় আসেন এলাকার অনেক কৃষক ও দর্শনার্থী। কল্লোল বলেন বাগানটি দেখতে কিছুদিন পূর্বে এসেছিলেন কৈলাশ গঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান মিহির মন্ডল। তিনি বাগানটি দেকে মুগ্ধ হয়েছেন এবং ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট করেছেন। কল্লোল আরও বলেন আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ একমাত্র কৃষিই পারে দেশের মানুষের খাদ্যাভাব দূর করতে। অনেক সাফল্যের মাঝে তিনি দুঃখ করে বলেন কৃষি জমি নষ্ট করে এলাকায় রাতারাতি শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে এটা ঠিক নয়। কৃষি জমিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃমোছাদ্দেক হোসেন বলেন, কৃষিতে দাকোপ উপজেলা একটি মডেল। লবনাক্ত দাকোপের মাটিতে একসময় শুধু আমন ধান ছাড়া আর কিছুই হত না সেখানে মাঠে এখন বারোমাস ফসল থাকে। গরীব কৃষকরা পেয়েছেন অর্থের সন্ধান, আর তা সম্ভব হয়েছে এলাকার প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং কল্লোল গোস্বামীর মত একদল উদ্যমি কৃষকের সহযোগীতায়।