সবজি উৎপাদনে বিপ্লব

দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবজির উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এমনকি প্রাকৃতিক দৈবদুর্বিপাকে ধান উৎপাদনে বড় ক্ষতির পরও গত অর্থবছর (২০১৫-১৬) কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে সবজি। এ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো আলুর উৎপাদন হয়েছে ১০২ কোটি ১৫ লাখ টন। আগের অর্থবছরে এর ফলন হয়েছিল ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার টন। এক বছরে ফলন বেড়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার টন। এ সময় অন্যান্য সবজি উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ টন। এক বছরে সবজি উৎপাদন ১০ লাখ ৪৪ হাজার টন বা ৮ শতাংশ বেড়েছে। উপরি-উক্ত তথ্যগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) প্রতিবেদনের বরাতে আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ। আরও জানা যায়, সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত অর্থবছরে ৮৩৪ কোটি টাকার সবজি রফতানি হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের মজুরি ৩ বছরে বেড়েছে ৫ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশে সবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। এক দশকে সবজি চাষ বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। সবজি উৎপাদনের এ উন্নতি নিঃসন্দেহে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এটা অনায়াসে বলা যায়, দেশে সবজি উৎপাদনে বিপ্লব হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, লাভজনক হওয়ায় ধানের বিকল্প হিসেবে অনেক কৃষক এখন সবজি চাষে ঝুঁকছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ না বাড়লেও প্রতি বছর ফলন বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও ৭ টন সবজি হয়েছে এমন জমিতে এখন ১৫ টন সবজি পাওয়া যাচ্ছে। মূলত উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাওয়ায় কৃষি খাতের উৎপাদন বেড়ে চলেছে। আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, বর্তমানে শিক্ষিত লোকজন কৃষি খাতে আসছেন। আবার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে আগে দুইবার চাষ করা গেছে, এমন ফসল এখন বছরে চারবার চাষ করা যায় একই জমিতে। সবচেয়ে আশার কথা, কীটনাশক ব্যবহার না করে বিষমুক্ত সবজি চাষের প্রবণতা বাড়ছে।
দেশব্যাপী সবজি বিপ্লবের যে সূচনা ঘটেছে, এখন প্রয়োজন জাতীয় অর্থনীতিতে এর পরিপূর্ণ অবদান নিশ্চিত করা। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সবজি প্রায় ৫০টি দেশে রফতানি হচ্ছে, তবে পরিমাণগতভাবে আরও বাড়ানো সম্ভব। এক হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টন আলু রফতানি সম্ভব হলেও তা হচ্ছে না। আরেকটি বিষয়, সবজি বিপ্লবের সুফল যাতে কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায়, একদিকে চাষি সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না; অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতাকে অধিক মূল্যে সবজি কিনতে হচ্ছে। মাঝখান থেকে লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষি খাতের প্রকৃত বিপ্লবের জন্য এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।